দুই বছরে ১০০০ ব্যক্তিকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দিয়েছে দুদক
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৫
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দুর্নীতিবাজ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এবং চার্জশিট কিংবা কখনো দায়িমুক্তিও দিয়ে থাকে। গত ২ বছরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য, পুলিশ, আমলা, এনবিআর এবং রাজউকের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার এক হাজারের বেশি ব্যক্তিকে অনুসন্ধান পর্যায়ে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, কমিশন বাণিজ্য এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ ছিলো। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি কেবল তারাই পেয়েছেন দুদকের অব্যাহতি।
দুদকে আসা উল্লেখযোগ্য অভিযোগের মধ্যে তদন্ত শেষে যাদের ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে তাদের একজন ভোলার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আসে। মূল অভিযোগ ছিলো কমিশন বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন। এরপর অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে জ্যাকবকে অব্যাহতি দেয় দুদক।
এছাড়া ২০২০ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম ৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিলো। এমনকি তখন তার সম্পদের হিসাবও নেয় কমিশন। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় কমিশন।
কমিশন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালে ৭৫৩টি এবং গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৩১২টি ফাইল অনুসন্ধান পর্যায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব তালিকায় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি নুরুল আনোয়ার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক ডিজি সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুরুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক একেএম মমতাজ উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর সদস্য এস এম হুমায়ূন কবীর, ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হক, যুগ্ম সচিব জালাল আহম্মেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপ-কর কমিশনার হুমায়ূন কবীর, বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল বাশার পাটোয়ারি, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহা, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-সচিব দিপংকর রায়, যমুনা অয়েলের জিএম মাসুদ করিম, যমুনা অয়েলের ডিজিএম অর্থ মোহাম্মদ খসরু আজাদ, যমুনা অয়েলের এজিএম অর্থ মোহাম্মদ আবুল বশরসহ ১ হাজার বেশি ব্যক্তিকে অব্যাহতির চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
এদিকে ২০২২ সালে কমিশনে প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে। যার মধ্যে কমিশন ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে দুদক। এছাড়া ৩০৬০টি অভিযোগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয় ব্যবস্থা নিতে। আর ১৪ হাজার ১১৯টি অভিযোগ কিছুই করা হয়নি। হিসাবের খাতায় সংখ্যার পরিমাপে দুদক ২২ সালে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ অভিযোগ আমলে নিয়েছে।
অপরদিকে, ২০২১ সালে দুদকে মোট অভিযোগ জমা পয়ে প্রায় ১২ হাজার, ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৪৮৯টি। ফলে কমিশনে অভিযোগ জমার পরিমাণ বাড়ছে কিন্তু অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত কমছে। এছাড়া ২০২২ সালে ৩৫০টির বেশি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে কমিশন। একই অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ শতাধিক, মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ২৮০টি এবং চার্জশিট দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৭০টি এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে ৭৮টি।
এছাড়া দুদকে বর্তমানে ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে আর মামলা চলমান আছে ১৭০০টি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। এই বিষয়টি প্রমাণ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তারই একটি প্রকট দৃষ্টান্ত এইসব ঘটনাগুলো। দুদককে আরও শক্তিশালী এবং কঠোর হতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তারা সবাই ভাল সেটাও কিন্তু নয়। কোন কিছু না ঘটলে বা না হলে কিন্তু অভিযোগ আসার কথা নয়। আমরা দেখেছি অতীতে বড়বড় রাঘব বোয়ালদের দায়মুক্তি দিয়েছে কমিশন।’
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২ বছরে অনেক প্রভাবশালীকেও আইনের আওতায় এনেছে কমিশন। এই কমিশন আসার পরে একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। শুধু দায়মুক্তি নয় দায়বদ্ধতার কথাও বলতে হবে। একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। কমিশনের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। দুর্নীতির প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
সারাবাংলা/এসজে/এমও