Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ বছরে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৫০

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সবার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার প্রতি অবদান স্মরণ করেন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০-লাখ শহিদ এবং ২-লাখ নির্যাতিত মা বোনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। ১৫ই আগস্ট নরপিশাচ ঘাতকদের হাতে নিহত সব শহিদদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত ২১ হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি।

একইসঙ্গে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমা হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রতিও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সরকার গঠনের পর যেসব রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মারা গেছেন তাদেরও আত্মার মাগফিরাত এবং শান্তি কামনা করেন টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি— তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে একটু নাড়া দিতে চাই।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনও বিশ্বব্যাপী মন্দাবস্থা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলত। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করত, তেমনি চুলা জ্বলত না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল।’

এমনি এক অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিই বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি এবং জনগণের সামনে তুলে ধরি। জনগণের বিপুল ম্যানডেট নিয়ে সরকার গঠনের পর সেই ইশতেহারের আলোকে আমরা আশু করণীয়, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি।’

একইসঙ্গে স্থবির অর্থনীতিকে সচল করতে শুরুতেই কৃষি, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ছোট বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এমনিভাবে প্রতিটি খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বে মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চুলায় রান্না হয়।’

নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জানান, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ এ দেশের মহৎ এবং বৃহৎ অর্জনসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা অর্জনের অবদানের কথা স্মরণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করে দেয় অভিযোগ করেন তিনি।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তার সেই সরকারের মেয়াদে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নানা সূচক তুলে ধরেন তিনি।

২০০১ সালে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আবারও ব্যহত হয় বলে দাবি করেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদ শেষে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সে কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে হয়। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়ে বলে সে কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।’

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। গত অক্টোবরে ৫ম বারের মত বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান হয়েছে।’

‘ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার ওপর সার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছি। আমরা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি’ বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

জাতির উদ্দেশে ভাষণ টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর