Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ যুগ ধরে কাঁটাতারেই ঝুলে আছে ফেলানী হত্যা মামলার পিটিশন

জাহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:০৩

কুড়িগ্রাম: ৭ জানুয়ারি, শনিবার। কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার এক যুগ আজ। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার। বিচারিক কাজ ভারতের উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকায় এখনও ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ফেলানীর বাবা-মা। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বিচারিক কাজ বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।

বিজ্ঞাপন

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় নির্মম হত্যার শিকার হয় কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মরদেহ।

বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত ফেলানীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মনবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় তোলে। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ আদালত।

বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পিছিয়ে এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়েকে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের আশা করছেন তার পরিবার।

ফেলানীর বাবা মো. নুর ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে ফেলানীকে সঙ্গে করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় আমার চোখের সামনে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। দুই দেশের সরকার যেন সঠিক বিচারটা করে।’

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমি ভারতে ছিলাম। আমার বোনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য ফেলানীর বাবা ফেলানীকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় আমার মেয়েকে বিএসএফ হত্যা করেছে। ফেলানী আমার বড় মেয়ে। বিএসএফ আমার বুকটা খালি করে দিয়েছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমার আত্মা শান্তি পাবে না।‘

বিজ্ঞাপন

নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের ফেলানীর প্রতিবেশিরা জানান, ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে সাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়াটা দুঃখজনক। ফেলানী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিও তাদের।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশনের শুনানি এখনও শুরু হয়নি। আশা করছি বিলম্ব হলেও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হবে।’

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। মেয়ের বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে। ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর।

সারাবাংলা/এমও

কাঁটাতার কিশোরী ফেলানী হত্যা ফেলানী হত্যা ফেলানী হত্যা মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর