Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগের চিকিৎসায় নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:০০

ঢাকা: দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বা মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগ বেশি হচ্ছে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।

‘স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি: বাংলাদেশ পারেসপেক্টি প্রাইমেরি রেজাল্ট ডিসিমিনেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। শনিবার (৭ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তসলিম উদ্দিন।

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের ১৮টি ইনস্টিটিউট ও প্রাইভেট চেম্বার থেকে মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত সমস্যায় আক্রান্ত মোট ২ হাজার ৪৬৯ জনের ওপর এ গবেষণা করে বাংলাদেশ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি (বান্সকি)।

গবেষণায় বলা হয়, মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ৩৫ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। অর্থাৎ কর্মক্ষম সময়ে তারা অক্ষম হয়ে পড়ছেন। রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৯ জন (৫৭ দশমিক ১ শতাংশ) আঘাতজনিত, ১ হাজার ১৪ জন (৪১ দশমিক ১) রোগ সম্পর্কিত ৪৬ জন (১ দশমিক ৯) কড়া ইকুইনা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে জানানো হয়, মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগ-সম্পর্কিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল অবক্ষয়, ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর টিউমার ৪০ দশমকি ৩ ও যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। আঘাতজনিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল উপর থেকে পড়ে যাওয়া, ৪৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপর সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বেশিরভাগ আঘাতমূলক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সঙ্গে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত-পা হাড়ের ফ্র্যাকচার। সবচেয়ে বেশি জটিলতা ছিল অন্ত্র ও মূত্রাশয়, ৭ দশমকি ৩ এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা ১ দশমিক ৭।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীবনের খুবই মূল্যবান কর্মক্ষম সময়ে এ রোগ হয় এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে আড়াই থেকে ৫ লাখ মানুষ মেরুদণ্ডের আঘাত বা রোগজনিত সমস্যায় ভোগেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি আক্রান্ত পরিবারে তার চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। এজন্য গবেষণা ও সচেতনতা দরকার। সচেতনতার জন্য গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ফেইল সুইসাইডের কারণে মানুষ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বেশি হচ্ছে। এজন্য এটি রোধে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে গাছ থেকে পড়ে অনেকেই স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়ছেন। এজন্য গ্রামে গাছে উঠার জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। এজন্য একটি ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়ে নীতি নির্ধারকরা মনোবিশেষ করতে পারে। নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি স্পাইনাল কর্ডে আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য বলা যাবে না যে, মেয়েরা কম আক্রান্ত হচ্ছে। নারীদের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি আক্রান্ত প্রতিরোধে ওড়না পরে রাস্তা পারাপার, মোটর বাইক ও রিক্সায় চলাচল করার সময় অধিক সচেতনা প্রয়োজন। কারণ অনেক নারী রাস্তায় চলাচল করার সময় রিক্সা ও মোটর বাইকে ওড়না পেঁচিয়ে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়েন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়া রোগীদের চিকিৎসায় বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকরা যাতে এসব হাসপাতালে ঠিকমতো কর্তব্য পালন করতে পারেন। এজন্য তাদের আবাস স্থান সুনিশ্চিত করতে হবে। এতে করে রোগীর পাশাপাশি তার পরিবারকে অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।’

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন স্পাইন নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো উচ্চতা গাছ ও বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া। এসব প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা। যেমন ট্রাফিক আইন মেনে চলা, ড্রাইভারকে সচেতন করা আবশ্যক। স্কুল বাচ্চাদের ভারী ব্যাগ বহন না করা। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়া রোগীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ সালেক। মডারেটর ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মসিউর রহমান খসরু।

সেমিনারে বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো— স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তিদের কার্যকারিতা, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্যগুলো বর্ণনা ও রোগীদের এই অবস্থা নিয়ে বেঁচে থাকার অর্থ কী তার মূল্যায়ন। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা, মেরুদণ্ডের আঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনকে উন্নত করতে সমাজ কী করতে পারে, সে সম্পর্কে এই গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই গবেষণার ফলাফলগুলো নীতি নির্ধারকদের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুস্থতার জন্য নীতি সংস্কার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, ডিজিএইচএসের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বক্তব্য রাখেন। বানস্কি স্টাডি গ্রুপের রিসার্চ অ্যাসিট্যান্ট ডা. আনিকা তাসনিম গবেষণার তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি তুলে ধরেন।

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ সালেকের সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক ছিলেন স্পাইনাল নিউরোসার্জন ও সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

এ ফলাফল সামনে রেখে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে গবেষণার দ্বিতীয় পর্বের জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে গবেষণা শুরু হবে। সেখান থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক জীবন বৃত্তান্ত আমাদের এ গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনা হবে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

সারাবাংলা/এসবি/এনএস

টপ নিউজ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর