প্রতারণার নানা রঙ: কেউ আমদানিকারক, কেউ বাণিজ্য সচিব
৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চলমান বিশ্বমন্দায় ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এতে ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আর এর সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি ‘প্রতারক চক্র’। কেউ চিনির, কেউ ভোজ্যতেলের আমদানিকারক; আবার কেউ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেজে প্রতারণার জাল পাতে। যার শিকার হন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের কয়েজন।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমন চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কর্মকর্তারা। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার অভিনব নানা কায়দার কথা জানতে পারেন অভিযানকারী দলের সদস্যরা।
গ্রেফতার ছয় জন হলো- শেখ জাহাঙ্গীর কবির (৪৬), মোহাম্মদ আলী (৫১), ওয়াসিম আহমেদ (৩৭), নাজমুল হুদা খান (৪৬), রাজিবুল হক বাবু (৩৮) এবং মো. শাহজালাল (৫৩)।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, শেখ জাহাঙ্গীর কবির ও মোহাম্মদ আলী এই প্রতারক চক্রের মূল নেতা। তারা নগরীর অভিজাত হোটেলে থাকে। জাহাঙ্গীর নিজেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে পতাকার স্ট্যান্ড লাগানো পাজেরো গাড়িতে চলাফেরা করে। আর মোহাম্মদ আলী নিজেকে ভোজ্যতেল ও চিনির আমদানিকারক বলে পরিচয় দেন।
গ্রেফতার বাকি চার জন তাদের সহযোগী। ওয়াসিম ব্যবসায়ী মহলে শীর্ষ এক সেনা কর্মকর্তার ভাই হিসাবেই পরিচিত। বাকি তিন জন তাদের হয়ে কথিত আমদানি করা তেল-চিনি বাজারে সরবরাহের নামে প্রতারণা করে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্রাজিল থেকে চিনি ও তানজানিয়া থেকে চোরাই পথে ভোজ্যতেল আনার কথা বলেছিল তারা। সেগুলো বাজারে কম দামে সরবরাহের কথা বলেছিল। কেউ প্রাথমিকভাবে তাদের কথায় আস্থা দেখালে তাদের প্রথমে হোটেলে নিয়ে চোরাই পথের আমদানিকারক হিসেবে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো। সেখানে ‘সচিব’ জাহাঙ্গীর ও কথিত সেনা কর্মকর্তার ভাই ওয়াসিমও থাকত। মূলত লেনদেনের কথা এই তিনজনের সঙ্গেই হতো। কেউ তেল-চিনি নিতে রাজি হলে সচিব তাকে ব্যাংক থেকে লোন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিত।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম-বন্দর) মোহাম্মদ আলী হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন ব্যবসায়ী বিশ্বাসের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ টাকা গচ্চা দেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ টাকার চেক এবং ব্যবসায়িক অংশীদারের চুক্তিনামা জব্দ করা হয়েছে। মূলত এরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দেশজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক আছে।’
‘সাম্প্রতিক ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সেটাকে তারা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা বলত, তেল-চিনির জাহাজ সাগরে আছে, বাংলাদেশে আসছে। এখানকার বাজার থেকে চিনি ও তেল কিনে স্যাম্পল হিসেবে পাঠাতো ব্যবসায়ীদের কাছে। অথচ তাদের কাছে তেল কিংবা চিনির মতো ব্যবসার কোনো পণ্যই নেই।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলী হোসেন আরও জানান, প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রামে তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণার আরও অভিযোগ আসছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম