Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রাজিলের কংগ্রেস-প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ-সুপ্রিম কোর্টে হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:০৭

দুই বছর আগে মার্কিন ক্যাপিটল হিলের মতোই আরেকটি কাণ্ড এবার ঘটল ব্রাজিলে। দেশটির ডানপন্থী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সমর্থকরা কংগ্রেস ভবন, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছে। তাদের তাণ্ডবে ব্রাজিলের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল তিনটি ভবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষনিক হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার গভর্নরকে বরখাস্ত করেছেন সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট।

গত ৩০ অক্টোবর ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এতে বামপন্থী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা জয় পান। এর পরপরই কয়েক মাস ধরে উত্তপ্ত ব্রাজিলের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও তাঁতিয়ে উঠে। গত ২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। একই দিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ব্রাজিলকে পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলেন জইর বলসোনারো।

লুলার ক্ষমতাগ্রহণের এক সপ্তাহ না পেরোতেই রোববার ব্রাজিলের তিন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলা চালিয়েছে বলোসোনারোর সমর্থকরা। রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার রাস্তায় হাজার হাজার হলুদ-সবুজ পরিহিত বিক্ষোভকারী দেখা যায়। তারা মিছিল সহকারে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালায়।

ব্রাসিলিয়ায় তিনটি ভবনই পাশাপাশি অবস্থিত। এই তিন ভবনে পৌঁছাতে ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিতি সেনা হেডকোয়ার্টারের সামনে দিয়ে যেতে হয়। গত অক্টোবরে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বলোসানোরোর সবচেয়ে উগ্র সমর্থক হিসেবে পরিচিত বলসোনারিস্তাসরা সেনা হেডকোয়ার্টারের সামনে জড়ো হচ্ছিল বলে জানা গেছে। শুধু ব্রাসিলিয়ায়ই নয়, দেশটির অন্যান্য শহরের সেনা ক্যাম্পের সামনে তারা কয়েকদিন ধরে অবস্থান নিচ্ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায়  ব্রাজিলের সেনা হেডকোয়ার্টারের সামনে দিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা বিশাল মিছিল সহকারে পাড়ি দেয় দাঙ্গাকারীরা। এসময় কোনো নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাঁধা দিতে দেখা যায়নি। হামলাকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস ভবন ও সুপ্রিম কোর্টে আক্রমণ চালালে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ পিছু হটে। এসব ভবনে কার্যত অবাধে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলোসোনারোর সমর্থক দাঙ্গাকারীরা। পরে ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।  ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এসময় অন্তত ৪০০ দাঙ্গাকারীকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী।

পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিন ভবনের কিছু চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ কর্মকর্তা প্ল্যানল্টো প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতরের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে ভবনের ভেতরে ব্যাপক ভাংচুরের চিত্র দেখা গেছে।

ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি  প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় আমার অফিসে আছি। আপনি দেখতে পাচ্ছেন সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাসাদে যা করা হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। কক্ষ, সরঞ্জাম, কম্পিউটারের অবস্থা দেখুন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, হামলাকারীদের আক্রমণ ঠেকাতে রাজধানীর নিয়মিত নিরাপত্তা বাহিনী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। পরে প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা হামলাকারীদের দমনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘোষণা করেন। ব্রাজিলের রাজধানীতে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এ ঘটনার জন্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জইর বলোসোনারোকে দায়ী করেছেন। নির্বাচনের পর জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে বলে বলোসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ লুলা দ্য সিলভার।

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো অবশ্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন। তবে রোববার তার সমর্থকদের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। এক টুইটে বলসোনারো বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আইনকে সম্মান করে এবং তা গণতন্ত্রের অংশ। কিন্তু অবক্ষয় এবং সরকারি ভবনে আক্রমণ—যেমনটি আজ ঘটেছে এবং ২০১৩ ও ২০১৭ সালে বামরা ঘটিয়েছিল— তা আইনের লঙ্ঘন।

বলসোনারো টুইটে বলেন, আমি সবসময় সংবিধান অনুযায়ী কাজ করেছি। আইন, গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং আমাদের পবিত্র স্বাধীনতাকে সম্মান ও রক্ষা করেছি।

বলোসোনারোর ডানপন্থী দল লিবারেল পার্টিও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দিনটিকে ব্রাজিলের জন্য দুঃখের দিন বলে আখ্যায়িত করেছে।

লিবারেল পার্টি প্রধান ভালদেমার কস্তা নেটো বলসোনারো সমর্থকরা মূল সরকারি ভবনে প্রবেশ করার পর এক বিবৃতিতে বলেন, আজ ব্রাজিলিয়ান জাতির জন্য দুঃখের দিন। আমরা জাতীয় কংগ্রেসের ক্ষতির সঙ্গে একমত হতে পারি না। এরকম অসুস্থতা আমাদের জাতির নীতির অংশ ছিল না। আমি বলতে চাই যে, আমরা এই ধরনের মনোভাবের তীব্র নিন্দা করছি।

ব্রাজিলে এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও। রোববার এক টুইট বার্তায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সমর্থকদের এমন কাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমি ব্রাজিলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর ও গণতন্ত্রের উপর আক্রমণের নিন্দা জানাই। ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং ব্রাজিলের জনগণের ইচ্ছাকে অবমূল্যায়ন করা চলবে না। আমি প্রেসিডেন্ট লুলার সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, আমি ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর আজকের হামলার নিন্দা জানাই। ব্রাজিলের জনগণ এবং দেশটির প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকে সম্মান করতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী তাই হবে। ব্রাজিল একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশ।

সোমবার ভোরে ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল গভর্নর ইবানেস রোচাকে বরখাস্ত করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং সিনেটর র‍্যান্ডলফ রড্রিগেসের একটি আবেদনে আদালত এই সিদ্ধান্ত দেন।

রোচা এর আগে দাঙ্গা প্রতিরোধে তার ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, আমাদের শহরে আজ যা ঘটেছে তার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার কাছে ক্ষমা চাই। আজ যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। তবে মোরেস আদালতে তার যুক্তিতে বলেন, দাঙ্গাকারীদের দমনে ইবেনিসের আচরণ বেদনাদায়ক নীরব ছিল।

সারাবাংলা/আইই

জইর বলসোনারো টপ নিউজ ব্রাজিল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর