Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে রাজউকের আপিল শুনবে সর্বোচ্চ আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৫০

হাইকোর্ট

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর জারি করা স্থিতাবস্থা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

আদালতে রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর ব্যবসায়ীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।

পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, হাতিরঝিল প্রকল্প নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আর হাতিরঝিলের রেস্তোরাঁ, স্থাপনা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ করা যাবে না মর্মে যে স্থিতাবস্থা দিয়েছিলেন, সেটি বহাল থাকবে।

গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ। পাশাপাশি আপিল দায়েরের অনুমতি দেন আদালত।

এর আগে ১৯ জুন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা পরামর্শ সম্বলিত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

গত ২৪ মে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাজউক।

মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টকে পাবলিক ট্রাস্ট (জনগণের সম্পত্তি) ঘোষণা করে গত বছরের ৩০ জুন রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে হাইকোর্ট হাতিরঝিলের পানি এবং এর নান্দনিক সৌন্দর্য ও মহামূল্যবান এই জাতীয় সম্পত্তি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো:

১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা “হাতিরঝিল” নামে পরিচিত পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি (Public Trust Property) তথ্য জনগণের ন্যাস সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি।

২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সকল প্রকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ- সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।

৩. “হাতিরবিল” প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সকল হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।

৪. অত্র রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনে মধ্যে সকল হোটেল, রেস্টুরেন্ট
এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য প্রতিপক্ষগণকে (রিটের বিবাদীগণ) নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এ ছাড়া ছাড়া আদালত হাতিরঝিলের বিষয়ে ৯ দফা পরামর্শ প্রদান করেন। সেগুলো হলো:

ক. হাতিরবিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনার নিমিত্তে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা “হাতিরখিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। খ. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করা। গ. জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা। ঘ. নির্ধারিত দুরত্বে বিনামূল্যে সকল জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা। ঙ. পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা। চ. পানির জন্য ক্ষতিকর হেতু লেকে সকল প্রকার যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ছ. লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। জ. হাতিবধিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা।  ঝ. হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ (রাজস্ব) বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।

এর আগে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে-আউট প্লানের নির্দেশনার বাইরে কতিপয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টম্বর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে ২০২১ সালের ৩০ জুন ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

টপ নিউজ হাইকোর্ট হাতিরঝিল প্রকল্প


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর