এমআরএম সেবা না দেওয়ায় বাড়ছে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা
৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৭
ঢাকা: ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ বা এমআরএম সেবা না পাওয়ায় দেশে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ফলে মাসিক বন্ধ থাকলে সর্বশেষ মাসিক হওয়ার ৭০ দিন পর নিয়ম মেনে এই ওষুধ খেলে মাসিক শুরু হবে। কিন্তু সচেতনতা, প্রচারণা ও সেবা প্রদানে অনীহার কারণে এমআরএম সেবা না পাওয়ায় দেশে অনেক প্রসূতিই ভুল পদ্ধতিতে গর্ভনিরোধ করতে যেয়ে মৃত্যুর শিকার হন। নারী পক্ষ পরিচালিত মানসম্মত এমআরএম সেবা ব্যবস্থা বিষয়ক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) নারীপক্ষের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নারী পক্ষের প্রকল্প সমন্বয়কারী সামিয়া আফরিন। উপস্থিত ছিলেন নারীপক্ষের সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন, নাজমুন নাহার ও অন্যান্য।
আলোচনায় জানা যায়, আমাদের দেশে এমআর চিকিৎসা পদ্ধতি ১৯৭২ সাল থেকে সরকার স্বীকৃত। দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এই সেবা পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী দেশে ১২টি ওষুধ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান এমআরএম ওষুধ তৈরি করে। কিন্তু সহজলভ্য ও কার্যকরী হওয়ার পরও ওষুধ প্রশাসন ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির অবহেলার জন্য এমআরএম নিয়ে প্রচারণা কম। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এধরণের সেবা দেওয়ার সামাজিক, ধর্মীয় ইত্যাদি নানা কারণে অনীহাও দেখায়। ফলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ থেকে মুক্তি পাওয়ার নিরাপদ পদ্ধতি থাকার পরও অনেক নারীই হাতুড়ে চিকিৎসক, কবিরাজ, অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে গর্ভপাত করাতে যান। ফলে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রাণে বেঁচে গেলেও ভুগছেন দীর্ঘ শারীরিক জটিলতায়।
ছয়টি জেলার ১৫টি উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এই জরিপ পরিচালনা করে সংস্থাটি।
গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও এনজিও ক্লিনিক এবং ওষুধের দোকানে কাউন্সিলিংসহ এমআরএম সেবার মান যাচাই, সন্তান ধারণে সক্ষম নারীদের এমআরএম সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা। এছাড়া এমআরএম সেবা নেওয়ার পর জটিলতার শিকার নারীরা সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে এমআরএম গ্রহণ পরবর্তী সেবা যথেষ্ট পরিমানে পাচ্ছে কিনা তা যাচাই করা। পাশাপাশি যৌনকর্মীদের এমআরএম সেবা বিষয়ে কি ধরণের জ্ঞান আছে এবং সম্মান ও মর্যাদার সাথে মানসম্মত সেবা পাচ্ছে কিনা তা খুঁজে দেখা।
গবেষণার ফলে জানা গেছে, বেশির ভাগ সন্তান ধারণক্ষম নারী এবং কমবয়সী ও নতুন যৌনকর্মীরা এমআরএম বিষয়ে জানেন না। অনেকেই এর ওর মুখে শুনে এই ওষুধ কিনতে আসেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী নিজে নন, পুরুষ বা পরিবারের অন্যান্য সদস্য এটি কেনেন। স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের এমআরএম বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিলেও সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কারণ দেখিয়ে সেবা দিতে অপারগতা প্রদর্শন। এছাড়া ওষুধ বিক্রেতাদের এমআরএম বিষয়ে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ এবং জাতীয় এমআরএম নির্দেশিকা সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই। সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে এমআরএম ওষুধ সরবরাহ অপর্যাপ্ত ও সেবাদানকারীদের আচরণও নেতিবাচক। এছাড়া সরকারি পর্যায় থেকে পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে নাই কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা।
এমআরএম কতটা নিরাপদ জানতে চাইলে সামিয়া আফরিন বলেন, ‘গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত জরায়ুতে একটি রক্তপিণ্ড হিসেবে থাকে। ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে এসব ওষুধ খাওয়া নিরাপদ। তবে তা নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে খেতে হবে। কিন্তু দেশে অনেক জরুরি ওষুধের মত এটিও প্রেসক্রিপশন ছাড়াও বিক্রি হয়। ঠিক মতো গাইডলাইন মেনে এধরনের ওষুধ না খেলে অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে অনেকেই মারা যান ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার মুখোমুখি হন।’
সুইডেনভিত্তিক সংস্থা আরএফএইউ’র অর্থায়নে এশিয়ার পাঁচটি দেশে গবেষণা সম্বয়ের কাজ করছে মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান অ্যারো। আর বাংলাদেশে অ্যারোর পক্ষ থেকে গবেষণা পরিচালনা করছে নারীপক্ষ ও বাপসা। নারীপক্ষ অ্যাডভোকেসির দায়িত্ব পালন করছে। গবেষণার ফলাফল নিয়ে ওষুধ প্রশাসন ও ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন সম্মতি জানিয়েছে বলে জানান সামিয়া আফরিন।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম