ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা
১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০০
ঢাকা: দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার এক শতাংশের নিচে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে সংক্রমণ বাড়ার জন্য ওমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা একটি কারণ। একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত বাড়ার জন্য ওমিক্রনের উপধরন বলে পরিচিত এক্সবিবি.১ ও এক্সবিবি.১.৫ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতাকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই সতর্ক অবস্থায় দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওমিক্রনের বিএফ.৭ উপধরনের পাশাপাশি আগেই শনাক্ত হওয়া এক্সবিবি.১ ভ্যারিয়েন্টের কারণে সতর্ক অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও বাড়তে পারে ফেব্রুয়ারিতে। আর তাই এখনই প্রয়োজন সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। বিশেষ করে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাসটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি হাসপাতালে যেনো রোগীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন বন্দরে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠা্নেও স্বাস্থ্যসেবা মানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট মূলত ওমিক্রনেরই সাব-ভ্যারিয়েন্ট। সেখান থেকেই শাখা-প্রশাখাগুলো এসেছে। আর ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে যেটা বেশি সংক্রামক সেটাই টিকে থাকে, বাকিগুলো হারিয়ে যায়। এখন যেসব সাব-ভ্যারিয়েন্টগুলো এসেছে সেগুলো আগেরগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রামক। সেগুলোই টিকে আছে ও সার্কুলেশনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘যতদিন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থাকবে ততদিন এমন ভ্যারিয়েন্টও বাড়তে পারে। এই যেমন ডেল্টা, আলফাসহ বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের পরে ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বাড়ার ইতিহাস আমরা দেখেছি। বাংলাদেশেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সবিবি-১ এবং বিএফ-৭ শনাক্ত হয়েছে। এমন নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা সাব ভ্যারিয়েন্ট আসবেই। এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। তবে এর মানে এমন না যে কালকেই সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত তিন বছরে যে প্রবণতা তাতে দেখা যায় শীতের শেষ আমাদের এখানে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। আমাদের দেশে ফেব্রুয়ারির দিক থেকে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে এতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বেশি হবে না। কারণ আমাদের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমটা ভালোভাবে পরিচালনা করা হয়েছে।’
যে কোনো ভ্যারিয়েন্ট শুধু না বরং কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এখন পর্যন্ত যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের শরীরের মারাত্মক কোনো অসুস্থতা পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ তো আমরা কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে প্রথম থেকেই বলে আসছি- যোগ করেন ডা. মোশতাক হোসেন।
আলোচনায় যেসব ভ্যারিয়েন্ট
মূলত এক্সবিবি.১.৫ ও বিএফ.৭ নিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে বেশি আলোচনা চলছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়ানোর সক্ষমতার কারণে এগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে এরইমধ্যে বিএফ.৭ সাব-ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে একজন সংক্রমিত রোগীর নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে।
এছাড়া এক্সবিবি.১.৫ সাব ভ্যারিয়েন্টের কারণে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএফ.৭ সাব ভ্যারিয়েন্ট কী?
২০২১ সালের শেষভাগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এরইমধ্যেই ৩০ বারের অধিক বদলেছে এর জিনের গঠন। ফলে এটি খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, ভাইরাসের এই প্রজাতিতে প্রোটিনের বিন্যাস এমনভাবে বদলেছে যে, রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্টকেও ফাঁকি দিতে পারে। কোভিড টেস্টেও ধরা পড়বে না এই স্ট্রেন। ওমিক্রনের মোট পাঁচটি উপধরন শনাক্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত। এগুলো হলো–বিএ.১, বিএ.২, বিএ.৩, বিএ৪ ও বিএ.৫। এই তালিকায় নতুন সংযোজন বিএফ.৭.
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিএফ.৭ উপধরনেই শেষ নয়, জিনের বদলের কারণে তৈরি নতুন আরেকটি উপধরন তৈরি হতে পারে যা হয়তো আবার বদলাবে। ভাইরাসের এই মিউটেশন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ওমিক্রনের অন্যান্য ধরনে আক্রান্তদের শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা গেছে, নতুন বিএফ.৭ এর সংক্রমণেও একই উপসর্গ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর লক্ষণ ঠাণ্ডা জ্বরের মত।
এক্সবিবি.১.৫ সাব ভ্যারিয়েন্ট কী?
কোভিড-১৯ সংক্রমণের এক্সবিবি ধরন থেকে বিকশিত হয়েছে এক্সবিবি.১ ও এক্সবিবি.১.৫। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল এক্সবিবি। এই সাবভ্যারিয়েন্টের একটি মিউটেশন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছিল বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মানুষের কোষে এক্সবিবি.১-এর আক্রমণ করার শক্তি কমে এসেছিল বলেও ধারণা তাদের।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ওয়েন্ডি বারক্লে বলেন, ‘এক্সবিবি.১.৫ উপধরনেরও এফ৪৮৬পি নামে মিউটেশন রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে কোষকে আক্রান্ত করার শক্তি ফিরে পায়। ফলে খুব সহজেই এটি ছড়ায়। তবে মিউটেশনের এই ধারা বা ক্রমবিকাশ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উপেক্ষা করার নতুন পথ খুঁজে ধাপে ধাপে এটা বিকাশ লাভ করে।’
কেমব্রিজের ওয়েলকাম স্যাঞ্জার ইনস্টিটিউট ভাইরাসের ধরনগুলো শনাক্তের চেষ্টা অংশ হিসেবে সপ্তাহে ৫ হাজার নমুনা থেকে জেনেটিক সিকোয়েন্স তৈরি করছে।
প্রতিষ্ঠানটির ডা. ইওয়ান হ্যারিসন মনে করেন, ‘সম্ভবত ওমিক্রনের দুটি ভিন্ন ধরনে আক্রান্ত কারও শরীর থেকে এক্সবিবি.১.৫ উপধরনের উদ্ভব হয়। একটি ভাইরাসের জিনোমের কিছু অংশ এখানে দ্বিতীয় ভাইরাসের জিনোমের কিছু অংশের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নেতুন ধরনের মধ্যে দুই বৈশিষ্ট্যই মিলে গেছে। এখন এটি ছড়াচ্ছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে, এখন পর্যন্ত দেখা অন্যান্য উপধরনের তুলনায় এক্সবিবি.১.৫ ধরনের ছড়ানোর সুযোগ বেশি।
তবে সংস্থাটি এও বলেছে, আগের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি আরও গুরুতর বা ক্ষতিকর হবে কিনা, সেরকম কোনো ইঙ্গিত এখনও মেলেনি।
এক্সবিবি.১.৫ কোথায় ছড়াচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের মাঝে ৪১ শতাংশ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে এক্সবিবি.১.৫ উপধরন শনাক্ত হয়েছে। গেল বছরের শেষ মাসের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল মাত্র চার শতাংশ। এক্সবিবি.১.৫ সাবভ্যারিয়েন্টের এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দেশটিতে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
দেশটির ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের প্রায় ৪১ শতাংশ নমুনায় বর্তমানে এক্সবিবি.১.৫ উপধরনের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এটিকে ‘ক্র্যাকেন’কে ‘অত্যন্ত সংক্রামক উপধরন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও এই সংখ্যা বাড়ছে তবে দেশটি এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটির স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এরইমধ্যে সেখানে ছড়িয়ে পড়া ফ্লু নিয়েও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করার কারণে যুক্তরাজ্যের মত দেশে বড় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন না সংশ্লিষ্টরা।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডেভিড হেম্যান বলেন, ‘নতুন এই ধরন সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানার আছে। তবে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ভালোভাবেই পরিচালনা করা হয়েছে। আর তাই এখন যেসব দেশে ভালোভাবে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানো হয়েছে সেখানে সংক্রমণ বাড়লেও প্রাণ হারানোর ঝুঁকি অনেকাংশেই কম। ভ্যাকসিনের আওতায় এখনো যারা আসে নি তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়টি নতুনভাবে বলার কিছু নেই।’
চীনের বিষয়ে হেম্যান বলেন, ‘সেখানে ভ্যাকসিন নেওয়ার হার বিষয়ে অনেক ধরনের মতামত আছে। একইসঙ্গে দেশটিতে লকডাউনের কারণে প্রাকৃতিকভাবে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হতে পারে।’
ভারতেও এরইমধ্যে শনাক্ত হয়েছে এই এক্সবিবি.১.৫ উপধরন। মোট আট জনের নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে এই উপধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানানো হয়েছে জিআইএসএইডের তালিকায়। জিআইএসএইড হচ্ছে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইড) যা জার্মান সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সব ধরন এবং উপধরনই শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগকে আক্রান্ত করে। নাক ও গলা এগুলো আক্রান্ত হয়, ফুসফুসে যায় না। ফুসফুসে গেলে শ্বাসকষ্ট হবে, জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে। যদি বয়স বেশি হয় বা আগের থেকে যে কোনো রোগে ভোগেন তাদের এটা হতে পারে। ক্ষতির ক্ষমতা গুরুতর না হলেও বেশি ছড়াচ্ছে। যারা টিকা নিয়েছেন তারা আক্রান্ত কম হচ্ছেন। তাদের ক্ষতির সম্ভাবনাও কম। তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। তাই ভ্যাকসিন নিয়ে গুরুতর অসুস্থতা ঠেকানো সম্ভব।’
টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা থাকে বহুদিন। তবে পূর্ণমাত্রায় থাকে না। তাই ছয় মাস পর পর আর একটি ডোজ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে তৃতীয় ডোজ নেওয়ার সংখ্যা যথেষ্ঠ না। আর চতুর্থ ডোজ তাদের নেওয়া উচিত যাদের বয়সটা বেশি এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। যারা হাসপাতালে কাজ করছেন অর্থাৎ ফ্রন্টলাইনারদের টিকা নিয়ে নেওয়া ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে রোগীরা যেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে সেটার ব্যবস্থাও করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের পাশাপাশি রোগীদের হাত ধোঁয়ার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
ডা. মোশতাক বলেন, ‘বিভিন্ন বন্দরে স্ক্রিনিং বাড়িয়ে বাইরে থেকে আসা রোগীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা যেতে পারে। কিন্তু দেশের ভেতরেই রোগী যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। বদ্ধ জায়গা বা নির্দিষ্ট সীমানার মাঝে বাতাস পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে কম থাকে সেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই হাসপাতাল ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঝুঁকি বেশি। এসব দিকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের নতুন উপধরন নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধে তৎপর হতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে পরিচালকের নেতৃত্বে ইনফেকশন প্রিভেনশন সংক্রান্ত আলাদা কমিটি রয়েছে। হাসপাতালে মাস্ক পরা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা নিয়ে তাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, আমরা জানি যে সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম জায়গা হলো হাসপাতাল। তাই কোনো সুস্থ রোগী হাসপাতালে এসে অন্য রোগীর সংস্পর্শে যেন সংক্রমিত না হয়। এটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল বলেন, ‘নতুন উপধরন নিয়ে আমরা ভীত নই। আমাদের সংক্রমণের হার বর্তমানে ১ শতাংশেরও কম। তবে নতুন উপধরনকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। সংক্রমণের হার যেন কোনোভাবেই বাড়তে না পারে, আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘নতুন উপধরনকে আমরা খুব ক্লোজলি মনিটর করছি। সংক্রমিত দেশগুলো থেকে যারা আসছেন, তাদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষায় যাদের নমুনা পজিটিভ পাচ্ছি তাদের আইসোলেটেড করছি, আরটিপিসিআর করছি। এই কার্যক্রমগুলো আমাদের নিয়মিত চলছে। স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি সবাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের প্রাথমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। হ্যাঁ, ভ্যাকসিন নিলে আক্রান্ত হবে না কেউ- এমনটা বলা যায় না। তারপরেও আমরা দেখেছি যারা ভ্যাকসিনের দুই ডোজও অন্তত নিয়েছেন তারা আক্রান্ত হলেও শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বানও জানাই।’
২০২৩ সালের পরিসংখ্যান
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ৫৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৯ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তবে এই বছর এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে।
সারাবাংলা/এসবি/একে