Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করফাঁকি রোধে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে হবে: গোলাম দস্তগীর গাজী


১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৩

ঢাকা: একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক। স্বাধীনতার পর শুরু করেন আরেক নতুন সংগ্রাম। যুদ্ধবিধবস্ত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে গড়ে তোলেন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। সরকারকে নিয়মিত কর দিয়ে দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি প্রতিবার সেরা করদাতা নির্বাচিত হচ্ছেন। বিদায়ী ২০২২ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত ২১ ডিসেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে শীর্ষ পাঁচ ব্যবসায়ীর নাম ঘোষণা করে। এ তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেন গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক।

একই ক্যাটাগরিতে শীর্ষ পাঁচ ব্যবসায়ীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তারই সুযোগ্য সন্তান, গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি গাজী গোলাম মূর্তজা।

সেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় সারাবাংলাডটনেটের পক্ষ থেকে গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট গোলাম সামদানী। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

বরাবরের মতো ২০২২ সালেও ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা নির্বাচিত বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক। এ বিষয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়া অবশ্যই গর্বের বিষয়। ভালো লাগবে, এটা স্বাভাবিক। এই ধরনের তালিকায় যখন নিজের নাম আসে তখন ভালো লাগে। মনে হয় দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। সেটা ভাবতেও ভালো লাগে।’

অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। অথচ এক পরিবার থেকে তিনি ও তার ছেলে সেরা পাঁচ করদাতার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসল কথা হলো ছেলেরা বাবাকে সবসময় অনুসরণ করে। বাবা যেখানে ভালোভাবে ট্যাক্স দেন তখন ছেলেরাও চিন্তা করেন, বাবা যেহেতু কর দেন আমাদেরও ঠিকমতো কর দিতে হবে। এটা পারিবারিক শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকেই আমার ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা সঠিকভাবে সময় মতো কর দিয়ে এবারও সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমার জন্য গর্বের।’

অনেক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা করভীতি রয়েছে। বিশেষ করে যেসব ব্যবসায়ী ঠিক মতো কর দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে করের আওতা না বাড়িয়ে এসব করদাতাদের ওপর নতুন করে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেক ব্যবসায়ী করের খাতায় নামই লেখাতে চান না। অনেকে মনে করেন, কর দেওয়ার খাতায় একবার নাম লেখালে এখান থেকে আর বের হওয়ার সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের মাঝে এই ধরনের একটা ভীতি রয়েছে। এটা দূর করতে হবে।’

করভীতি দূর করতে করণীয় জানতে চাইলে গোলাম দস্তগীর গাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করভীতি দূর করতে করের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি এনবিআর’র জনবল বাড়াতে হবে। গ্রাম-গঞ্জসহ প্রতিটি জায়গায় কর দেওয়ার মতো অনেক মানুষ রয়েছে। তাদের করের আওতায় আনতে হবে। এক জায়গায় বিশেষ করে শহরে বসে থেকে লোকজনকে চাপ দিলে করের আওতা বাড়বে না। করের আওতা না বাড়লে করের পরিমাণও বাড়ানো সম্ভব হবে না।’

গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘এনবিআর-এ সৎ ও দক্ষ অফিসার বাড়াতে হবে। এসব কর্মকর্তাদের কেবল শহরে বসিয়ে না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ প্রতিবেশি অনেক দেশের তুলনায় কম। এর কারণ সম্পর্কে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হলে তখন করের পরিমাণ অটোমেটিক বাড়বে। সেজন্য শিল্পায়ন বাড়াতে হবে, ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দিতে হবে। বর্তমানে সারাদেশ বিদ্যুৎতায়নের আওতায় এসেছে, লোডশেডিং নেই এবং কল-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এতে করে সারাদেশে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্পকারখানা তথা ব্যবসা বাড়লে সরকারের কর আহরণের পরিমাণও বাড়বে।’

কর ফাঁকিরোধে সরকারের করণীয় জানতে চাইলে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘কর ফাঁকিরোধ করতে হলে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে করফাঁকি কমে যাবে। সবকিছু ডিজিটাল সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে। এতে কার কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কত টাকার এলসি খোলা হয়েছে- এই তথ্যগুলো ডাটাবেইজে থাকবে। তখন কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে। মানুষ কর দিতে আগ্রহী হবে।’

বাজেটে কর আহরণের লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা যদি বেশি নির্ধারণ করা হয় তাহলে তা অর্জন করা কঠিন হয়। আর এ কারণেই কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

নিজের কর দেওয়া প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘ইনকাম ট্যাক্স ফাইল যখন থেকে খোলা হয়েছে তখন থেকেই আমি আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে কর দিয়ে আসছি। কর দেওয়ার শুরুতে আমরা বুঝতে পারতাম না কে সেরা করদাতা হচ্ছেন কিংবা কে কর বেশি দিচ্ছেন। ২০১০ সালে যখন থেকে সরকার সেরা করদাতা নির্বাচন শুরু করল তখন থেকেই আমি সেরা হয়ে আসছি। অর্থাৎ, প্রথমবার যখন সর্বোচ্চ করদাতার পুরস্কার দেওয়া হলো তখনই আমি সেরা নির্বাচিত হয়েছি। এরপর থেকে আমি প্রতিবারই সেরা করদাতা নির্বাচিত হচ্ছি।’

মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনি সরাসরি সম্পৃক্ত- বিষয়টি কেমন লাগে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশকে ভালোবাসলে সবই সম্ভব। নিজে পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি দেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে সেরা করদাতা নির্বাচিত করার কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। সবাই চান আমি সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করব। এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশে কর আহরণের পরিমাণ বাড়বে। সেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়া একটা গৌরবের বিষয়।

ব্যবসায়ীদের কর দিতে উৎসাহিত করতে কি করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী ট্যাক্স দিতে আগ্রহী। তবে ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা দূর করতে হবে। আমি দেখেছি, যারা ট্যাক্স দেন তাদের ওপরই যন্ত্রণা বেশি আসে। আর যারা ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্য কিন্তু দেন না, ট্যাক্সের খাতায় নামই লেখাননি, তারা খুবই আরামে আছেন, আনন্দে আছেন। ফলে অনেকে মনে করেন উনি ট্যাক্স না দিয়েই ভালো আছেন। আমিও ট্যাক্স দিব না। এই ধরনের ট্যাক্স ভীতি দূর করতে হবে। এটা দূর করতে পারলে এবং ট্যাক্স ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল করা সম্ভব হলে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবে না। করযোগ্য সবাইকে ট্যাক্সের আওতায় এনে করভীতি ও করফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা দূর করতে হবে।

উল্লেখ্য, গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- গাজী টিভি (জিটিভি), গাজী টায়ার, গাজী ট্যাংক, গাজী ডোরস, গাজী পাম্পস অ্যান্ড মটরর্স, গাজী সিংকস, গাজী রাবার প্লান্টেশন, গাজী পাইপ, গাজী গ্যাস স্টোভস, গাজী কমিউনিকেশনস, গাজী রিনিউয়েবল এনার্জি, গাজী ফিটিংস, গাজী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, গাজী থ্রেড পাইপ, গাজী টিউবওয়েল ও গাজী টয়েস।

সারাবাংলা/জিএস/রমু/পিটিএম

করফাঁকি গোলাম দস্তগীর গাজী ডিজিটাল পদ্ধতি বীর প্রতীক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর