ধাক্কা দিলেই আওয়ামী লীগ পড়ে গেল— এত সহজ নয়
১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৪৭
ঢাকা: সরকারবিরোধী দলগুলোর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। কেউ আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিলো আর আওয়ামী লীগ একেবারে পড়ে গেল— এত সহজ নয়। কিন্তু কেউ যদি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো— সেটি আওয়ামী লীগ পারে, এটি আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার শুরুতে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্যের শুরুতে ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পেছনে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা স্মরণ করেন।
১৪ বছর আগের বাংলাদেশ এবং বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার ছেলেমেয়েরা ধারণা করতে পারবে না। সেটি তারা চিন্তাও করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ওয়াদা দিয়েছিল। আর ওয়াদা দিয়েছিল বলেই আওয়ামী লীগ তা পূরণ করেছে। আওয়ামী লীগ যা বলে সে কথা রাখে।’
সরকারবিরোধী সমালোচকসহ রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২৯ বছর জিয়াউর রহমান- এরশাদ- খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। তারা কেন পারেনি দেশকে উন্নত করতে? যারা আজকে গণতন্ত্রের জন্য নাকি আন্দোলন করে? ওদের জন্ম তো গণতন্ত্র থেকে হয়নি। হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী সংবিধান লঙ্ঘনকারী মিলিটারি ডিটেকটরের পকেট থেকে।’
এরা তো ভাসমান দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে? সেই জন্যই তারা অগ্নি-সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়।’
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০১ সালে একবারই মাত্র শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে ঘটনা ঘটেছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অধীনে দুই দুইটা নির্বাচন। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুইটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরির করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বারবার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত; তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করল কবে? তাদের নিজেদেরই তো গণতন্ত্র নেই। দলের কোনো ঠিকানা নেই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। তাদের কিছু ভাড়াটিয়া লোক আছে দেশে বিদেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।’
বিগত ১০ জানুয়ারি ঢাকা দখল করে বিএনপির সরকার হটানোর হুমকির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। সেটি আর আমি বলতে চাই না। এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম অতি ডান; সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতিপাতি নেতা হয়ে; তারা নাকি একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। কেউ আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিলো আর আওয়ামী লীগ একেবারে পড়ে গেল— এত সহজ নয়। কিন্তু কেউ যদি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো— সেটি আওয়ামী লীগ পারে, এটি আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতেন্ত্রর চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা। আজকে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার বাক্স, ইভিএম সব তো আমরা চালু করেছি। যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ফলাফল দলের নেতাকর্মীর স্মরণ রাখার আহ্বান জানান। বিএনপিকে সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন উঠাতে পারে না। তো বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে হয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কয়টা সিট পেয়েছিল। ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। ওই নির্বাচন নিয়ে তো প্রশ্ন নেই।’
এরপর আমরা ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে কাজ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করে আর্থ সামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছি বলেই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা এই বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। তিনি শত্রুর (পাকিস্তান) বন্দিখানা থেকে এই মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। তাকে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার দেওয়া আদর্শ নীতি সেইটা অনুসরণ করেই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীলের মর্যাদা দিয়েছি।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতার কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা; আপনার আত্মত্যাগ, লাখো শহীদের আত্মত্যাগ কোনোদিন বৃথা যেতে পারে না। বৃথা যাবে না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। বাংলাদেশ সম্মানের সাথে থাকবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হবে।’
বিশিষ্টজন হিসাবে রামেন্দু মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
সভায় নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তারানা হালিম। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি।
সারাবাংলা/এনআর/একে