ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ কি ছিল এখানকার ছেলেমেয়েদের ধারণাই করতে পারবে না? সেটি তারা কিন্তু তাদের এটা জানা উচিত; আওয়ামী লীগ ওয়াদা দিয়েছিল বলেই আওয়ামী লীগ তা পূরণ করেছে। যে ওয়াদা আওয়ামী লীগ দেয় আওয়ামী লীগ সে ওয়াদা রাখে।
মঙ্গলবার (১০জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার শুরুতে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সভা যৌথভাবে পরিচালনা করছেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্যের শুরুতে ১০ই জানুয়ারি জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পিছনে ভূমিকা রাখা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বেঁচে থাকলে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারতেন এবং সেই গড়ার মতো তার সাহস কর্মদক্ষতা পরিকল্পনা ছিল বলে অবহিত করেন।
১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডে জাতির পিতাকে হারানোর প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দুভার্গ্য যারা আমাদের দেশের স্বাধীনতাই চায়নি। যারা যুদ্ধের সময় বেঈমানি করেছে। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। রাজাকার আলবদর বাহিনী বানিয়ে আমাদের মা বোনদেরকে হানাদার পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে। যারা বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠুক চায়নি যারা চায়নি তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে থাকেনি। সেই সঙ্গে তাদের দোসর যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তি; যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল, এরাও কিন্তু পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেন সবথেকে বেশি চেষ্টা চালিয়েছিল।’
আওয়ামী লীগ যে কথা বলে আওয়ামী লীগ সে কথা রাখে বলে জানান শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের পাশে ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দেশের মানুষের জন্যই তার জীবনের সংগ্রাম। কাজেই তাকে হত্যা করে এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের একমাত্র প্রচেষ্টা। সে কারণে দেশের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াক সেটি তারা কখনো চায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছে। আর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে আর দেশের মানুষ কিছু পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই যারা পাকিস্তান আমলে মাত্র মেজর পযন্ত হতে পেরেছিল। পাকিস্তান আমলে কিন্তু কেউ হতে পারেনি। পাকিস্তান আমলে কোন মেজর জেনারেলও ছিল না, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলও ছিল না, জেনারেলও ছিল না, একজন মাত্র কর্নেল। বাঙালিদের কোনো প্রমোশন হতো না, কোনো সচিব হতে পারতেন না। বাঙালিদের কোনো অবস্থানই ছিল না।’
পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশটাকে যেন আরও সেই জায়গাটায় নিয়ে আসে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত কর হয়েছে। সেটাকে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এবং প্রতিটি জায়গায় আবার সেই পুরনো প্রভুদের স্মরণ করা হয়েছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ২১ বছর পরে সরকারে আসে। সরকারে আসার পরেই আমরা এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পদক্ষেপ নিই। কিন্তু মাত্র ৫ বছর হাতে সময় পেয়েছিলাম। যতুটুকু করেছিলাম ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় এসে একে একে সব ধ্বংস করে দেয় এবং তাদের সেই জঙ্গিবাদ দুর্নীতি স্বজন প্রীতি যার ফলে আবার বাংলাদেশ পেছনে চলে যায়। বিদেশি নির্ভরশীলতা বিদেশিদের কাছে হাত পেতে চলা এটিই ছিল তাদের নীতি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘কাজেই আওয়ামী লীগ ওয়াদা করেছিল দেশের উন্নতি করবে। তাই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম। কমিউনিটি ক্লিনিক করে স্বাস্থসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দেওয়া শুরু করেছিলাম। মানুষের সেবা করাটা যে সরকারের একটি দায়িত্ব। এটি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরেই কিন্তু সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করেছিল।’
২০০৮’র নির্বাচনে ঘোষণা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। জাতিসংঘই বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মযার্দা দিয়েছিল। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আরও এক ধাপ উপরে উঠতে চাই। আল্লাহর রহমতে যে ওয়াদা আওয়ামী লীগ দেয় আওয়ামী লীগ সে ওয়াদা রাখে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা ২০২১’এ যখন স্বাধীনতার সবুর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করি তখনই কিন্তু আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। অর্থ্যাৎ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নত হই উন্নয়নশীল দেশে অর্থ্যাৎ আমরা যে ওয়াদা দেই তা রাখি।’
আজকে দেশের মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা সমস্ত ব্যবস্থা সুন্দর করে যাচ্ছি। এই বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূীমিহীন থাকবে না। ভূমিহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়া আমরা সেটি করে দিচ্ছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং জাতির পিতা গড়ে তোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে আজকে ত্রিশ প্রকার ওষুধ বিনাপয়সায় দিয়ে যাচ্ছি। সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ভাগে উন্নীত করেছি। শতভাগ ছেলেমেয়ে আজকে স্কুলে যাচ্ছে। পড়াশোনা সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা এসেছে বলেও জানান তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
বিশিষ্টজন হিসাবে রামেন্দু মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বক্তব্য রাখেন। সভায় নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তারানা হালিম। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি।