চবিতে হল ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৭ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্তৃপক্ষ। অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িত হওয়া, হল ভাঙচুর, প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও সাংবাদিক হেনস্থাসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৮টায় অনলাইনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এতে সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়াও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে সভায় অংশ নেন।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীদের মারামারির ঘটনায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের তাসফিয়া জান্নাত নোলককে এক বছর ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিক রেদুয়ান আহমেদকে শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের আরশিল আজিম নিলয়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শোয়েব মোহাম্মদ আতিককে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ওই বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট অফিসে ভাঙচুর, প্রভোস্টকে হুমকি ও কর্তব্যরত কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ত্ব বিভাগের হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার হয়। এ ছাড়াও একই ঘটনায় হলের ছাত্র না হয়েও ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণ, জোরপূর্বক হলে অবস্থান ও শিক্ষকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শহিদুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর স্যার এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িত হওয়া, হল ভাঙচুর, প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছেন ছয় জন। তারা হলেন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তনয় কান্তি সরকার, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিফাতুল ইসলাম, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ও একই শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন। তাদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন, দোকান ভাঙচুর ও আইন শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স বিভাগের আমিরুল হক চৌধুরী, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের মো. সাখাওয়াত হোসেন, একই শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. ইকরামুল হক, দর্শন বিভাগের নয়ন দেবনাথ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ ফাহিম, একই শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস।
এ ছাড়া গত বছরের ২৪ আগস্ট মোবাইল ও ব্যবহৃত নোটবুকে তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা ও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা ও ভয়াল সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন সভায় সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে-আইনশতঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্পট ও মাদক সেবনের স্থানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ছাত্রত্বহীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত একাধিক ঘটনায় জুনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সংঘর্ষে জড়ানো অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকারাচ্ছন্নসহ সামগ্রিক বিষয়টি ওভার সুপেরিয়টিতে ভোগার সামিল এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সুপারিশ করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যাচাই বাছাই করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকজন ক্ষমা চেয়েছেন। কয়েক জনকে ক্ষমা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/সিসি/ইআ