‘ভোট চুরির প্রকল্পে কারা আছে মানুষ তা দেখছে’
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দেয়াললিখন’ পড়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘পরিষ্কার বার্তা— আপনাকে বিদায় নিতে হবে, আর কোনো পথ নেই। আর যদি দেয়ালের লিখন পড়তে না পারেন, তাহলে আপনাদের জন্য মোটেও মঙ্গল হবে না। ভোট চুরির প্রকল্পে কারা কারা আছে, কারা কারা যোগ দিচ্ছে— মানুষ সব দেখছে। যদি মনে করেন আবার ভোটচুরির কাজ-কারবার করবেন, সেটা বাংলাদেশের মানুষ করতে দেবে না।’
বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে মঞ্চ বানিয়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে পারবে না। জনগণ জয়ী হবেই। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে গেছে। এখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। পুলিশের একটি অংশ, সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে ব্যবহার করছে। তবে আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি না। যেখানেই হামলা হচ্ছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করছে। আজকের কর্মসূচি থেকে দখলদার, অবৈধ, অনির্বাচিত ও ফ্যাসিস্ট সরকারকে চট্টগ্রামবাসী আবারও পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে— বিদায় হও।’
বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচি দেখে সরকার ভয় পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার এত বেশি ভীত হয়ে গেছে যে, তারা এখন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয়কে জয় করে ফেলেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রমাণ করেছে, যত বাধা আসুক তারা পিছপা হবে না। আমাদের ১৩ জন সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, তবুও আমরা পিছপা হইনি।’
গুম-খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ নেই মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘আন্দোলনের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণ নিয়ে ফেলেছে। জনগণের হাতে যখন আন্দোলনের মালিকানা চলে যায়, সেই আন্দোলন কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না। নেতা যেই থাকুক বিএনপির, তার পেছনে দাঁড়িয়ে মানুষ আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন যতবড় ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচার সরকারই হোক না কেন, তার থাকার কোনো সুযোগ নেই।’
সরকারের পদত্যাগ, একাদশ সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর-দক্ষিণ, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। লাখখানেক মানুষের জমায়েতের কারণে সিআরবির সকল পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পুরো সিআরবি জুড়ে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ।
কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘চট্টগ্রাম আমাদের জন্য একটি আবেগের জায়গা। আমরা মুসলমানরা মক্কা মদিনাকে আমাদের তীর্থস্থান বলি। আর আমরা যারা জিয়ার সৈনিক, বিএনপি করি, একজন বিএনপি কর্মী হিসেবে আমাদের রাজনীতির তীর্থস্থান হচ্ছে এই চট্টগ্রাম। এখান থেকেই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দান থেকে জনসভার মাধ্যমে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।’
দলটির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘নোয়াখালীর কালাইয়া’ সম্বোধন করে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর কালাইয়া ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ভারতকে নাকি তার অনেক ভালো লাগে। তাদের দলের জম্মই হয়েছে ভারত থেকে। তারা ভারতকে পছন্দ না করে বাংলাদেশকে পছন্দ করতে পারে না। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন- আমার এক ইঞ্চি জায়গা কেউ নিতে পারবে না। সেই জিয়াকে হত্যা করে বাংলাদেশকে মুঠোয় আনতে তাদের দাদারা অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। জনগণ তাদের চায় না। তারা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রেখে মনে করেছে আন্দোলন দমানো যাবে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যত সহযোদ্ধাকে কারাগারে রাখুন না কেন, আমাদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, ততদিন এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও জয়নাল আবেদীন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উত্তর জেলার আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, রাঙ্গামাটির সভাপতি দীপন তালুকদার, খাগড়াছড়ির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কক্সবাজারের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ফেনীর আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার এবং বান্দরবন জেলার সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এনএস