Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘করোনা থেকে বাঁচতে নেওয়া উদ্যোগ কার্যকর ছিল না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৪

ঢাকা: করোনার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে নেওয়া কোনো উদ্যোগই কার্যকর ছিল না। এসব কারণে লাভের থেকে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। এসব উদ্যোগের অধিকাংশই নেওয়া হয় রাজনৈতিক চিন্তা ও দেখাদেখি থেকে। অর্থাৎ অন্য দেশ করছে আমরাও করি। এছাড়া জনগণকে দেখানো দরকার যে, সরকার তাদের জন্য দৃশ্যমান কিছু করছে। বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদে লকডাউনের প্রয়োজন ছিল না। এতে যে পরিমাণ আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে লাভ তেমন আসেনি। পাশাপাশি কোভিডের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুতর দেওয়ায় অন্যান্য রেগেও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু সেদিকে নজর ছিল না গণমাধ্যমসহ নীতিনির্ধারকদের।— বুধবার (১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সন্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড.কাজী ইকবালের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. আননিস চৌধুরী। তিনি তার রচিত ‘নুগেট ইন টু লকডাউন? বিহেভিয়ারাল ইকোনমিস, আনসার্টিনিটি অ্যান্ড কোভিড-১৯’ শীর্ষক বই থেকে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেন।

ড. আননিস চৌধুরী বলেন, ‘কোভিডে কিছুই করার দরকার ছিল না। তাহলে প্রাণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সব কিছুই বাঁচতো। বৃটেনে যারা কোভিডে মারা গিয়েছেন তারা অধিকাংশই ঘরে ছিলেন। সুইডেনে যারা মারা যান তারাও বেশিরভাগ ঘরেই ছিলেন। প্রথম দিকে স্বল্প মেয়াদে লকডাউন ঠিক ছিল। তখন বোঝা যাচ্ছিল না যে, কোথা থেকে কি হচ্ছে। কিন্তু যখন সব কিছু পরিষ্কার হলো তখন কেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন দিয়েছিল? এর ফলে সব কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক ও শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হতে আগামী দুই প্রজন্ম লাগবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন যে জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার উদাহরণ হচ্ছে- ইউরোপীয় ২৪টি দেশে কঠিন ও হালকা লকডাউন ছিল। কিন্তু মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। কোভিডের কারণে বিশ্বের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছিল কোভিড নিয়ন্ত্রণ। ফলে অন্যান্য রোগসহ কোনো দিকেই নজর দেওয়া হয়নি। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমে গেছে। লকডাউনের কারনে অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে। সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। নীতি নির্ধারকদের এটা বোঝার দরকার ছিল যে, সম্পদ সীমিত। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে।’

অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এই প্রফেসর বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি যে শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে সেটি নয়, এর পেছনে কোভিডের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলোর প্রভাবও দায়ী। ভ্যাকসিনের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই থেকে চার ডোজ টিকা দিয়েও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাহলে ভ্যাকসিনের পেছনে এত সম্পদ ব্যয় করার দরকার ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বে স্প্যানিস ফ্লুতে মারা যায় ২১৯ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মানুষ। আর ২০১৯-২০ সালে কোভিডে মারা গেছে ৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন মানুষ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, স্প্যানিস ফ্লুর চেয়ে কোভিড কোনোভাবেই বড় কোনো দুর্যোগ ছিল না। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে, স্প্যানিস ফ্লুতে সব বয়সের মানুষই মারা গিয়েছিল। আর কোভিডে একটু বয়স্ক মানুষই বেশি মারা গেছেন। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লুতে মারা যায় ৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মানুষ। ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে মারা যায় ২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে কোভিড-১৯।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, কোভিড মহামারির আগেও অন্যান্য রোগসহ স্বাভাবিক মৃত্যুও বিশ্বব্যাপী কম হয়নি। হিসাব করলে দেখা যায় কোভিডের চেয়েও সেসব মৃত্যু ছিল অনেক বেশি। বিশ্বব্যপী কোভিড-১৯ মহামারি চলার সময়, ক্যানসার, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগেও মানুষ মারা গেছেন। এসব রোগের সঠিক সুচিকিৎসা ছিল না। এদিকে, এসব রোগে মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমসহ সবার মাঝে খুব বেশি আলোচনায়ও ছিল না। সবাই ব্যস্ত ছিলেন কোভিডের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে।

ইংল্যান্ড ব্যাংকে কর্মরত অর্থনীতিবিদ ডেভিড মাইলস’র উদাহরণ দিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি ৯ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয় তাহলে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হবে ৬৮ বিলিয়ন পাউন্ড। আবার মাত্র ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি ৯ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয় তাহলেও ক্ষতি হবে ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। যদি ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে ১৫ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয় তাহলে নিট ক্ষতি হবে ৩২৪ বিলিয়ন পাউন্ড। সুতরাং ক্ষতির বিষয়গুলো মাথায় নেওয়ার দরকার ছিল।

সম্মেলনে ড. কাজী ইকবাল বলেন, ‘সেমিনারের আলোচনা থেকে যা বোঝা গেল তা হচ্ছে- করোনা মোকাবিলায় নেওয়া উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চিন্তা ও দেখাদেখির বিষয়টিও কাজ করেছে। এর অর্থ ওই দেশ লকডাউন করছে আমরাও করব। রাজনৈতিক চিন্তা হলো সরকার জনগণের জন্য কিছু একটা করছে। এটা দৃশ্যমান কিছু। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, সরকার আমাদের পাশে আছে। তবে যদি নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে তরুণরা থাকতো তাহলে হয়তো এত লকডাউন হতো না। তুলনামূলক বয়স্করাই নীতি নির্ধারণ করেন বলেই লকডাউনের মতো কর্মসূচি তাদের পছন্দ ছিল।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

উদ্যোগ করোনা কার্যকর বিআইডিএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর