Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যাবে না— শীতের মাঝামাঝি এসে পরামর্শ!

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩০

ঢাকা: বিগত বছরগুলোতে শীত মৌসুম শুরুতেই নিপাহ, রোটা ভাইরাস, চিকেনপক্সসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করা হয়ে থাকে। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে খেজুরের কাঁচা রস না খাওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমে এ বিষয়ে উৎসাহ বাড়ায়— এমন সংবাদ প্রচারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে চলতি শীত মৌসুমের মাঝামাঝিতে এসে খেজুরের রস কাঁচা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যেই দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত নারীর খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বুধবার (১১ জানুয়ারি) ‘শীতের সংক্রামক রোগ এবং নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ’ শীর্ষক সেমিনারে একজন মারা যাওয়ার তথ্য জানায় আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।

সেমিনারে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি রাজশাহীর বাসিন্দা। ওই নারীর কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাস ছিল। এর আগে ২০২২ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তিনটি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। যার মধ্যে দু’জন মারা যান। এদের একজন ছিলেন নওগাঁর, অন্যজন ফরিদপুরের।’

অন্যান্য বারের মতো চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের নানা স্থানে রস উৎসবসহ নানা ধরনের আয়োজন দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা যায় খেজুরের কাঁচা রস নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকলেও এবার তেমন কোনো প্রচারণা না থাকায় খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ায় ছিল না কোনো শঙ্কা।

অন্যান্য বছর আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে কাঁচা রস পানে আগ্রহ জন্মে এরকম সংবাদ প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধও জানানো হয়ে থাকে। তবে চলতি শীত মৌসুমের শুরুতে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাহলে কি এবার নিপাহ ভাইরাসের শঙ্কা ছিল না? মৌসুমের শুরুতেই এবার কেন নাগরিকদের সতর্ক করা হয়নি?— এমন প্রশ্নের কোনো উত্তরও মেলেনি সরকারি এই সংস্থাটির কাছ থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বছরব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। মৌসুমের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে রোগগুলোর প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা থাকে সেগুলো বিষয়ে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক ধাপ। এক্ষেত্রে জনসচেতনতার জন্য অবশ্যই মৌসুমের শুরুতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়াটা প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘খেজুঁরের রস কাঁচা খাওয়া আমাদের দেশে এক ধরনের ঐতিহ্য বলা যায়। এটা থেকে মানুষকে বিমুখ করতে হলে তাদের বোঝানো প্রয়োজন। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে খুব বেশি মৃত্যুর পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। তাই নাগরিকদের সচেতন করাটা জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছর নিপাহ বা অন্য রোগ বিষয়ে শীতের আগেই খেজুরের কাঁচা রস না খাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এবার সেটা না হওয়া দুঃখজনক।’

সেমিনারে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাবের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। মানুষ যখন ওই কাঁচা খেজুরের রস পান করে তখন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। সেই ব্যক্তি থেকে তার পরিবারের সদস্য বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচা খেজুরের রস এবং আধা খাওয়া ফল খাওয়া উচিত নয়।’

সেমিনারে জানানো হয়, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে রস খাওয়ার পর আট থেকে ৯ দিন সময় লাগে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ছয় থেকে ১১ দিন পরে দেখা যায়। আইইডিসিআর’র গবেষকদের মতে, খেজুরের রস গরম করে পান করা নিরাপদ। এছাড়া খেজুরের রস সংগ্রহকারীদের কাজ শেষে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইইডিসিআর।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮-৯৯ সালে মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ নামক গ্রামে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় প্রথম। ওই গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম নিপাহ শনাক্ত হয় মেহেরপুরে। এর পর প্রায় প্রতিবছর কোনো না কোনো জেলায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৩২৬ জনকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৩১ জন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, মৃত রোগীর মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। ২০১৯ সালে আট জন নিপাহে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে চার জন মারা যায়। এই আট জনের মধ্যে পাঁচ জন ছিল একই পরিবারের। আর তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতিরোধের চেয়ে সচেতনতাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

আইইডিসিআর খেজুরের রস নিপাহ ভাইরাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর