Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অস্বচ্ছ লেনদেনে’র কারণে খুন হন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা!

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৪৮

ঢাকা: গম গবেষণা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন আনোয়ার শহীদ। দিনাজপুরে চাকরি করার সুবাদে একজনকে ব্যবসার উদ্দেশে ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। পরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অন্য একজনের কাছ থেকে নেন লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দুইজনের চক্রান্তেই তাকে হতে হয় খুনের শিকার।

সম্প্রতি মামলাটি তদন্ত করে আদাবর থানার সাব-ইন্সপেক্টর সানাউল হক দুই জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছেন। চার্জশিটে হত্যার কারণ হিসাবে টাকা দেওয়া এবং নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

মামলার চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আনোয়ার শহীদ গম গবেষণা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন। পরে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দিনাজপুর চাকরি করার সুবাদে জাকিরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় আনোয়ার শহীদের। ঘটনার প্রায় ৭/৮ বছর আগে তাদের সম্পর্ক। জাকিরুল ব্যবসা করার জন্য আনোয়ার শহীদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেন। প্রতিমাসে আনোয়ার শহীদকে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা হয়। জাকিরুল বিভিন্ন সময়ে তাকে এক লাখ টাকা দেয়। জাকিরুলের মাধ্যমে আসামি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আনোয়ার শহিদের পরিচয় হয়।’

‘একপর্যায়ে সাইফুলকে পিয়নের/গম ক্ষেতের পাখি তাড়ানোসহ গম ক্ষেত পরিচর্যার চাকরি দেওয়ার কথা বলে। বিনিময়ে তার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন আনোয়ার শহীদ। সাইফুল তাকে এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। চাকরি দেওয়ার কথা বলে আনোয়ার শহীদ দুই দফায় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন। কিন্তু আনোয়ার শহীদ সাইফুলকে চাকরি দিতে পারেননি। এমনকি তার টাকাও ফেরত দেননি। সাইফুল পাওনা টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকলে আনোয়ার শহীদ তাকে জানান, জাকিরুল ইসলামের কাছে তার ১২ লাখ টাকা পাওনা আছে। সেখান থেকে সাইফুলকে এক লাখ টাকা নিতে বলেন।’

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, কিন্তু আনোয়ার শহীদ জাকিরুলকে টাকা দিতে বারণ করেন। এজন্য সাইফুলকে টাকা দেননি জাকিরুল। পাওনা টাকার জন্য আনোয়ার শহীদকে বারবার ফোন দেন সাইফুল। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় সাইফুলের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে আনোয়ার শহীদকে পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং এক লাখ টাকা ফেরত না পাওয়ায় জাকিরুল, সাইফুল ইসলাম তাকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দুইজন ৯ নভেম্বর নাইট কোচে দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। পরদিন ঢাকায় এসে তারা মিরপুরের একটি হোটেলে ওঠেন। ওই দিন তারা রেস্টে থাকে এবং একটি চাকু কেনেন।

ঘটনার দিন ১১ নভেম্বর জাকিরুল ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসক দেখান। মোবাইলে কথা বলে সন্ধ্যায় জাকিরুলের সঙ্গে কল্যাণপুরের হানিফ বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা করেন আনোয়ার শহীদ। তখন জাকিরুল ভিকটিমকে নিয়ে প্রিন্স বাজার যাওয়ার কথা বলে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাইফুল চাকু নিয়ে শ্যামলী হোলিলেন গলির রাস্তায় অবস্থান করে ওঁৎ পেতে থাকে। সন্ধ্যায় জাকিরুল ভিকটিমকে নিয়ে পায়ে হেঁটে প্রিন্স বাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আনোয়ার শহীদ কিছু বুঝে ওঠার আগে সাইফুল তাকে হত্যার উদ্দেশে পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করে।

ভিকটিম গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। আসামিরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন ভিকটিমকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলা বিষয়ে আনোয়ার শহীদের বোন ও মামলার বাদী ফেরদৌস সুলতানা বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেলো বড় ভাই খুন হয়েছেন। খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এর যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।’

সারাবাংলা/এআই/এমও

অস্বচ্ছ লেনদেন খুন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর