জনবিচ্ছিন্ন নেতারা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না: প্রধানমন্ত্রী
১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪২
ঢাকা: জনবিচ্ছিন্ন নেতারা আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে দাঁড়ান, তারা নির্বাচনে নমিশন পাবেন। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক নেই, তাদের দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সংসদীয় দলের সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ সদস্যদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান। সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ, বিরোধীদলের আন্দোলন কর্মসূচিসহ সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সংসদ সদস্যদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার পরামর্শও দেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সার্ভে করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তার কাছে সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, ভোট চান, জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদের চায়, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে যাদের সুম্পর্ক নেই, এলাকায় যান না— তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’
বিরোধীদলের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। তবে আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালের মতো সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। এই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলের সংসদ সদস্যদের এখন থেকেই মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে হবে।’
সংসদ নেতা এমপিদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের এই তিন মেয়াদের সরকার যে সব উন্নয়ন কাজ করেছে সেগুলো তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মগুলোও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। অতীতে তারা ক্ষমতায় থেকে যে দুর্নীতি করেছে, লুটপাট, সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেগুলো মানুষকে বলতে হবে। এছাড়া বিরোধীদলে গিয়ে আন্দোলনের নামে তারা যে আগুন সন্ত্রাস করেছে, মানুষ খুন করেছে, জনগণের সম্পদক নষ্ট করেছে এগুলোও মানুমের কাছে গিয়ে বলতে হবে, মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।’
সভায় শাহজাহান খান, আবুল কালাম আজাদ, আ স ম ফিরোজ, সাদেক খান, আতিউর রহমান আতিক, মেহের আফরোজ চুমকি, মেরিনা জাহানসহ বেশ সংসদ সদস্যও বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে জেলা সফরের জন্য অনুরোধ জানান। জেলা সফরে গেলে সেখানকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো কেটে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সফর শুরু করেছেন। আগামীতেও যতদূর সম্ভব সেটা অব্যাহত রাখবেন। আর যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে অবশ্যই যাবেন।
সভা শেষে একাধিক সংসদ সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। কিছুক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছেন। আর কিছু বিষয়ে তিনি নোট নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সভায় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজের অসমবণ্টনের অভিযোগ তোলেন একাধিক সংসদ সদস্য। তারা বলেন, মন্ত্রীরা অন্য এলাকার দিকে না দেখে কেবল নিজের এলাকার দিকে গুরুত্ব দেন। মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন সব এলাকায় সমানভাবে হয়। মন্ত্রীরা যেন স্বজনপ্রীতি করে নিজের এলাকার ওপর বেশি গুরুত্ব না দেন। এছাড়া কয়েকজন এমপি নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করার পক্ষে অভিমত দিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো নির্বাচনের আগে শেষ করার অনুরোধ জানান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম