Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নগরে পাহাড়ি সম্মিলন

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৯

ঢাকা: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই অঞ্চল ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে যেমন আলাদা, তেমনি সমৃদ্ধ কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে। পাহাড়ি এই অঞ্চলে বাস করা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, পোশাক, খাদ্যভ্যাস ও জীবনাচারণ। আর সেই ভিন্নতা ও সৌন্দর্যের টানে সমতলের মানুষ ছুটে যান পাহাড়ে। তবে এবার খোদ রাজধানীতেই ছুটে এসেছে পাহাড়িরা।

বিজ্ঞাপন

সমতল আর পাহাড়ের ব্যবধান ঘোচাতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে রোববার (১৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত।

পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ক তথ্যাদি সমতলের মানুষের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের জন্য এই মেলার আয়োজন। এ মেলার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

মেলার স্টলে চার দিনব্যাপী তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার দ্রব্য প্রদর্শন ও বিক্রয় অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালেদ। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হলো পার্বত্য মেলা। এই মেলার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমতলের মানুষের পরিচয় হচ্ছে। যা সম্প্রীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অশান্ত পরিবেশের অবসান হয়। যার ফলে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষিতের হার সমতল অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় বরাবরই ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। পার্বত্য মেলার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিত্র ফুটে ওঠেছে। তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সামগ্রী, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাতেঁ বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমী ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার যা মেলার আকর্ষণকে অধিকতর বাড়িয়ে তুলেছে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।’

মেলা উদ্বোধন হতে না হতেই দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। সমতলের বাসিন্দারা তো বটেই, রাজধানীতে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও দলবেঁধে আসছেন মেলায়। সমতলের দর্শনার্থীরা খুশি পাহাড়ের জীবন ও পণ্যের প্রদর্শন দেখে। আর পাহাড়ের বাসিন্দারা খুশি একই জায়গায় নানা জাতির সমাবেশ দেখে।

মেলা ঘুরে দেখা যায় কেউ বা পণ্য নেড়ে-চেড়ে দেখছেন, কেউ আবার কিনছেন পাহাড়ে উৎপাদিত ফসল, খাবার, তাদের হাতে তৈরি পোশাক, গয়না, খাবার ইত্যাদি। কেউ কেউ এখানে বসেই খাচ্ছেন পিঠাসহ অন্যান্য পাহাড়ি খাবার। একদল যেমন ঘুরছেন মেলা প্রাঙ্গণে, আরেকদল উপভোগ করছেন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বাংলার পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষার নাচ ও গানের আয়োজন ছিল।

শুধু বিক্রিই নয়, নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শন করতে পেরে খুশি পাহাড়ের উদ্যোক্তারা। পার্বত্য এই মেলার মাধ্যমে পাহাড় ও সমতলের এই মেলবন্ধনে ঘুচে যাক দূরত্ব এমনটাই আশা তাদের।

উল্লেখ্য, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই মেলা। নেই কোনো প্রবেশমূল্য। সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পার্বত্য মেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ১০৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব স্টলে তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাদ্যদ্রব্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়রাম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সাংসদ দীপংকর তালুকদার, সাংসদ বাসন্তী চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়রাম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

নগর পাহাড় সম্মিলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর