সেচ কাজে ব্যবহার হবে পাহাড়ি ঢল, আসছে ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প
১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৪৯
ঢাকা: পাহাড়ি ঢল সংরক্ষণ করে সেচ সুবিধার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে মাল্টিপারপাস হাইড্রোলিক এলিভেটর ডাম নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করে পাহাড়ি ঢলসহ বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জলরাশি সংরক্ষণ করা হবে। খালের উভয় তীরে ৪ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা কাজ করার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালে ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এইচইডি ড্যাম নির্মাণ করা হবে। এর ফলে শুস্ক মৌসুমে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে এক হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যাবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নদীতীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন শেষ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে- শুষ্ক মৌসুমে পানি স্বল্পতার জন্য প্রকল্প এলাকায় সেচ কাজসহ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ অঞ্চলে ড্যাম এবং রিজার্ভার নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢালসহ বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পানি সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। যা পরবর্তীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। পানি সংরক্ষণ ও নদী পথের ল্যান্ডইপিং, সেচের পানি সংরক্ষণ, নদীর ধারণ ক্ষমতা বর্ধন ইত্যাদি নানাবিধ প্রকল্পে এইচইডি (হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম) একটি নতুন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি অনেকটা রাবার ড্যামের মতো। তবে আধুনিক নির্মাণশৈলী ব্যবহৃত হওয়ায় এর সুবিধা রাবার ড্যামের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। চীনা প্রতিষ্ঠান বিআইসি হাইড্রলিক এলিভেটর ড্যাম (এইচইডি) প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। চীনে এ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি প্রকল্প এরইমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
হাইড্রোলিক এলিভেটর নির্মাণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ২০১৩ সালের ৩ থেকে ৯ মে চীনে অবস্থিত কয়েকটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম পরিদর্শন করে। কমিটি পরিদর্শন শেষে দেশের পার্বত্য এলাকায় পাইলটভিত্তিতে অন্তত দুটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের সুপারিশ করে একটি কারিগরি প্রতিবেদন জমা দেয়।
পরবর্তী সময়ে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের সম্ভাব্য অবস্থানগুলো পরিদর্শনের উদ্দেশ্য বিআইসির একটি বিশেষজ্ঞ দলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
২০১৫ সালের ২২ থেকে ২৯ জুন চীনা দলটি দেশে এইচইডি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে উপযুক্ত স্থান শনাক্তকরণের উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খাল, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলার মন্দাকিনী নদী এবং খাগড়াছড়ি জেলার দিঘিনালা উপজেলার মাইনী নদীসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে। চীনা দলটি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খাল এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মাইনী নদীতে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৩০০ মিটার খাল খনন, ২১০ মিটার সেচ কাঠামো, ৫১০ মিটার সংযোগ সড়ক, একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম, একটি রেস্ট হাউজ, অফিস ভবন, গার্ড রুম নির্মাণ প্রভৃতি।
সারাবাংলা/জেজে/একে
উন্নয়ন প্রকল্প জমি সেচ পরিকল্পনা কমিশন পাহাড়ি ঢল শ্রীমাই খাল