যাত্রী সেজে নির্জন স্থানে নিয়ে চালককে খুন করতেন তারা
১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৯
ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা নিহত মোস্তফার সত্তরোর্ধ্ব মা সামছুন্নাহার। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ১১ দিনের মাথায় আমার মেয়ের জামাইয়ের কাছে একটি ফোন আসে। জানতে পারি আশিয়ান সিটি নামে একটি জায়গায় আমার ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে।’
আমি এখন কার কাছে যাব আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘ছেলের বউসহ আমার তিন নাতি-নাতনি আছে। তারা ছোট ছোট, তাদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব? আমার ছেলেই আমার সংসার চালাত। আমার কেউ রইল না।’
ক্লুলেস হত্যা ও গুম-ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজার, রাজনগর, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশা ছিনতাই, হত্যা ও গুম চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়।
আটকেরা হলেন মো. খালেদ খান শুভ (২০), মো. টিপু (৩১), মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসান (২০), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), আব্দুল মজিদ (২৯) ও মো. সুমন (৩৫)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বাটন মোবাইল, ২ চাকু (সুইস গিয়ার), অটোরিকশা ও পাথর জব্দ করা হয়।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, ভিকটিম মো. মোস্তফা গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানোর উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। পরবর্তী সময়ে কোথাও তার সন্ধান না পাওয়ায় তার মা শামছুন্নাহার দক্ষিণখান থানার নিখোঁজ জিডি করেন। ভিকটিমের মা জানতে পারেন ১৭ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানাধীন আসিয়ান সিটির ২৩ নম্বর রোডের পশ্চিম পার্শ্বে আসিয়ান সিটির ফাঁকা প্লটে একটি অজ্ঞাতনামা মরদেহ পড়ে আছে। ভিকটিমের মা ও বাবা ওই স্থানে পৌঁছে অজ্ঞাতনামা মরদেহটি তার ছেলে মোস্তফার (৩৫) বলে শনাক্ত করেন। এরপর ভিকটিমের মা শামছুন্নাহার বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ডিবি প্রধান বলেন, ‘ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করে। গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানাধীন আসামি মো. খালেদ খান শুভকে গ্রেফতার করে। আসামির হেফাজত থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত বাটন মোবাইলটি জব্দ করা হয়।’
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘গ্রেফতার মো. খালেদ খান শুভর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মো. টিপু ও মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মো. টিপু ও মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও আব্দুল মজিদদের গ্রেফতার করা হয়।’
গ্রেফতার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও আব্দুল মজিদের কাছ থেকে অস্ত্র মামলার ঘটনায় ভিকটিমের অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। অন্য একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুম, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর মো. টিপু, মো. হাসানুল ইসলাম ওরফে হাসান ও মো. শুভ যাত্রী সেজে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালককে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানাধীন পূর্বাচলের ২৫ নম্বর সেক্টরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর শুভর কেনা ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে অন্য একটি অটোরিকশার চালককে হত্যা করে তার মরদেহ রোডের পাশে ড্রেনে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি জানায়, এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ঢাকা মহানগরীয় থানা ও ঢাকার আশেপাশের জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, গুম ও ছিনতাই ঘটনায় আরও মামলা রয়েছে। আসামিরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না তা ডিবি পুলিশ খতিয়ে দেখছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে