ঝরাপাতার বিনিময়ে শীতবস্ত্র— বিদ্যানন্দের আয়োজন
১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শীত এলেই গাছের পাতাগুলো রঙ পাল্টাতে শুরু করে। সবুজ থেকে হলুদ, এরপর লালচে। বিবর্ণ পাতাগুলো একসময় ঝরতে শুরু করে। শ্যামল বাংলার গ্রামগুলো যখন সত্যিই গ্রাম ছিল তখন কুয়াশাভেজা ঝরা পাতা কুড়ানোর উৎসবে মেতে উঠতেন শিশুরা। সে কী আনন্দ, যা এখন আর চোখে পড়ে না!
চট্টগ্রামে ব্যতিক্রমী এক শীত উৎসবের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য সেই আনন্দময় শৈশবের কিছুটা ফিরিয়ে এনেছিল বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সঙ্গে ছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এই উৎসবে এসে হতদরিদ্র শিশু এবং তাদের অভিভাবকেরা কুড়িয়ে নেওয়া কয়েকটি ঝরাপাতার বিনিময়ে পেয়েছেন শীতবস্ত্র-পিঠাপুলি।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) নগরীর খুলশী থানার পলিটেকনিকে শহীদ ডা. মকবুল আহমেদ প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী ‘সবার জন্য শীত উৎসবে’ শামিল হন এক হাজার নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এরপর সিএমপি কমিশনার প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন। পিঠাপুলির স্বাদও নেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সুখে-দুঃখে, পূজাপার্বণে-ইদে সবসময় মানুষের পাশে আছে। গরমেও আছে, এমনকি শীতেও আছে। বিদ্যানন্দ সবসময় মানুষের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। আমরা সিএমপির পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দের এ উদ্যোগে শামিল হয়েছি। শুধুমাত্র শীতবস্ত্র বিতরণ নয়, বিদ্যানন্দ এই উৎসবে একটি পিকনিকে পরিণত করেছে। এখানে গরীব-অসহায় মানুষ এসে শীতবস্ত্র পাচ্ছে, পিঠা উৎসবে নানা ধরনের খাবার পাচ্ছে। এটা দেখে আমাদের সবার আনন্দ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। মানুষের জন্য কিছু করার মধ্যে যে আনন্দ, সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছি।’
বিদ্যালয়ের মাঠে সামিয়ানা টানিয়ে কমপক্ষে ১৫টি স্টল দেয়া হয়। শীতবস্ত্রের স্টলে ছিল নারীপুরুষ-শিশুদের জন্য কম্বল, চাদর, সোয়েটার, জ্যাকেট। পিঠার স্টলে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ফুচকাসহ খাবারের আরও কয়েকটি আইটেম ছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবে দুপুরে খাবারের আয়োজনও ছিল।
শিশুদের খেলাধুলার জন্য নৌকোর নাগরদোলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও রাখা হয়েছিল সেখানে। শিশুরা সেসব খেলনায় চড়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। শীত উৎসব তাদের কাছে ধরা দিয়েছিল ইচ্ছেপূরণের উৎসব আর খুশির উৎসবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড মেম্বার জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীতের প্রচণ্ড কষ্ট থেকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের রক্ষার পাশাপাশি কিছুটা আনন্দ-বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একসময় গ্রামে শীতের মধ্যে পাতা কুড়ানোর উৎসব হতো। আমরা সেই উৎসবের যে আনন্দ, সেই শৈশবকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এখানে চারটি পাতা দিলে চারটি টোকেন দেওয়া হচ্ছে। টোকেনগুলো দেখিয়ে শীতবস্ত্র, পিঠাপুলি, দুপুরের খাবার এবং খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারের অনধিক চারজন টোকেন পেয়েছেন।’
রোজী বেগম নিজের জন্য একটি সোয়েটার ও তার ছেলে মানিক নিয়েছে একটি জ্যাকেট। পাতার বিনিময়ে এত দামি পোশাক, বিস্মিত মা-ছেলের মুখ দিয়ে যেন কথাই বের হচ্ছিল না। রোজী বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের খুব ভালো লাগছে। সরকারকে (বিদ্যানন্দ) ধন্যবাদ।’
রিকশাচালক জহির একটি কম্বল এবং দুই ছেলের জন্য দু’টি জ্যাকেট নিয়েছেন। হাসিমুখে বিদ্যানন্দকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘গরীব মানুষের গায়ে শীতের কাপড় দিছেন (দিয়েছেন), আপনাদের অনেক ভালো হবি (হবে)।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস