Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টাকা দিলেও জমা হচ্ছে না ব্যাংকে, লিখিত অভিযোগে তোলপাড়

মনিরুল ইসলাম দুলু, মোংলা
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:১০

লোকাল প্রতিনিধি: মানুষ তার কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সঞ্চয় রাখটাই সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করে। সেই আস্থার জায়গা দুর্নীতির কালো থাবা পড়েছে-এমনটাই দাবি রাষ্ট্র মালিকানাধীন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বাগেরহাটের মোংলা শাখার গ্রাহকদের। তাদের অভিযোগ টাকা নিয়ে নয়-ছয় করেছেন শাখাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মোংলা শাখায় গ্রাহকরা টাকা জমা রাখলেও তা ব্যাংকে জমা হচ্ছে না-গ্রাহদের এমন লিখিত অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আর এ ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মোংলা শাখায় গ্রাহকরা টাকা জমা রাখলেও তা ব্যাংকে জমা হচ্ছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগশাজসে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন মধ্যে চারটি ইউনিয়নের গ্রাহকরা। সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তি মিলিয়ে কত টাকার আত্মসাৎ করা হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও সদস্যদের ধারণা প্রায় কোটি টাকা গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরতসহ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মোংলা শাখা সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় ১৭০টি সমিতিতে প্রায় ৮ হাজার সদস্য রয়েছে। এ সংখ্যক সদস্যদের তদারকি সঠিকভাবে করা হয় না। আরও অভিযোগ রয়েছে, সদস্যরা টাকা জমা দিলেও কয়েকজন মাঠ সহকারী তা জমা করতেন না। গ্রাহকেরা বলছেন, বিষয়টি নজরে আসার পর শাখা ব্যবস্থাপককে জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি।

ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে সুফল না পেয়ে গ্রাহকরা পরে অভিযোগ করেন থানা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। এরপরই শুরু তোলপাড়। শুরু হয় তদন্ত।

মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদার সদস্যদের কাছ থেকে বিনা রশিদে টাকা আদায় করে অফিসে জমা না করা। পাশবই তিন বছর তার কাছে আটকে রাখার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে নয়জন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেন।

এরপরে কিছু টাকা জমা করেন মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদার। লিখিত অভিযোগের বাইরে এই ইউনিয়নের আরও কয়েকজন সদস্য জানান,তারা টাকা জমা দিলেও মাঠসহকারী বিপ্লব টাকা অফিসে জমা দেননি।

এমন অভিযোগ রয়েছে চিলা, সুন্দরবন, মিঠাখালী, চাঁদপাই ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার গ্রাহকদের। এসব ইউনিয়নের গ্রাহকরা ব্যাংকের মোংলা শাখায় অভিযোগ করে কোন ফল না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলে ১২ জানুয়ারি ২৫ জন গ্রাহক অফিস ঘেরাও করেন।

চাঁদপাই ইউনিয়নের গ্রাহকদের অভিযোগ সাবেক মাঠ সহকারী পাশবই নিয়ে আটকে রেখেছেন। অভিযোগের বিষয়ে মাঠ সহকারী মো. শাহদুল ইসলাম বলেন, আমাকে চাঁদপাই ইউনিয়ন থেকে বদলি করে চিলা ইউনিয়নে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আমি পাশবই তুলে অফিসে জমা করেছি।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের গ্রাহক শেফালী গোলদার অভিযোগ করে বলেন, আমি ১০ হাজার টাকা লোন হিসেবে নেই কিন্তু সেই টাকা পাশবইতে তোলা হয়নি।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের গ্রাহক সুদীপ মণ্ডলের অভিযোগ তিনি টাকা জমা দিয়েছেন কিন্তু পাশবইতে তোলা হয়নি এবং পাশবইও তাকে দেওয়া হচ্ছে না।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আরেক গ্রাহক মো. হালিম জানান, তিনি ২১ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলেন এবং সেই টাকা পরিশোধও করেছেন কিন্তু তাকে এখনও পাশ বই ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের গ্রাহক আয়শা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার নামে ৪৮০০ টাকা জমা আছে। এখন দেখছি আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আমার জায়গায় মুজাহিদ শেখ নামে একজনের নাম লেখা আছে। মুজাহিদ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছেন।

এসময় তিনি বলেন, আমি বিষয়টি অফিসকে জানিয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

মোংলা উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা এসএম আনোয়ার উল কুদ্দুস জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মিঠাখালী ইউনিয়নের মাঠ সহকারী বিপ্লব মজুমদারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দেন। সেই অভিযোগ আমাকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে অভিযুক্ত মাঠ সহকারী ইতোমধ্যে কিছু টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছেন।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মোংলার শাখা ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার রায় জানান, সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক মাঠসহকারী মাসুদ শেখ বাগেরহাটের মোংলা ও ফকিরহাটে টাকা আত্মসাত করে। এ জন্য মাসুদ বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছে।

এছাড়াও চাঁদপাই ইউনিয়নের সাবেক মাঠ সহকারী পাশবই গ্রহকদের ফেরত না দেওয়া ও কিছু টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। এখন তা যাচাই-বাছাই চলছে। এছাড়া আর কোন সমস্যা এই শাখায় নেই।

অন্য ইউনিয়নেও টাকা আত্মসাতের সঙ্গে আপনি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে কি বলবেন?এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

উপজেলায় কতজন গ্রাহকের কত টাকা আত্মসাত হয়েছে তাও তিনি জানাতে পারেননি।

সুজিত কুমার বলেন, মোংলা উপজেলায় ১৭০টি সমিতিতে প্রায় আট হাজার সদস্য রয়েছে। তাদেরকে সবসময় সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব নয় ।

এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপংকর দাশ জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে গ্রাহকের সমস্যা কি তা শুনে ও যাচাই করে আমার দফতরে লিখিতভাবে জানাতে শাখা ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০২০ সালের পর থেকে কেন এই শাখাটিতে লস হচ্ছে তাও তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

ইউএনও দিপংকর দাশ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করতে কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে ২০১০ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গঠন করেন। পরবর্তীতে এই প্রকল্প বন্ধ করে গঠন করা হয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। শুরু থেকে এই ব্যাংকের মোংলা শাখাটি লাভজনক থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করতে শুরু করলে ২০২০ সাল থেকে লোকসানে পরতে থাকে।

সারাবাংলা/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর