বছরের শুরুতেই রেমিট্যান্সে সুবাতাস
১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:২১
ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি জানুয়ারির প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসীরা ৯২ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ২ লাখ টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৭৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা হবে টানা চার মাসের রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
জানা গেছে, বিদায়ী ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ৭৯ লাখ মার্কিন ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ্যাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা ১০ দশমিক ৭৮৫৭ বিলিয়ন এবং বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) ১০ দশমিক ৪৯২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের এপ্রিল, জুলাই ও আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ২০৯ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে ২০০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, জানুয়ারির এই কয়দিনে প্রবাসীরা বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১২ কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ লাখ মার্কিন ডলার। একই সময়ে সাত ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ব্যাকগুলো হলো- বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কর্মাশিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এদিকে, সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা।
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯ কোটি ২২ লাখ ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স
সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। অন্যদিকে, ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম