যে কোনো প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা সব সমাজে নিষিদ্ধ: ঢাবি উপাচার্য
১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৩২
ঢাকা: যে কোনো প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা সব সমাজেই নিষিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাবির মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনার তিনি এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে যুগে যুগে অশুভ শক্তির উত্থান হয়েছে আবার তা প্রতিহতও হয়েছে। সমাজের মধ্য থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিহত করার সেই শক্তির জন্ম হয় এবং সেই সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্যে কিছু মানুষেরও জন্ম হয়। এ অঞ্চলে যেমন জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে কোনো কারণে যখন মানুষ বিধ্বস্ত হয়, অসহায় হয়ে পড়ে, তখন কিছু ধর্মীয়গোষ্ঠী তাদেরকে সহযোগিতার জন্য টাকা এবং ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে এগিয়ে যায়। অর্থাৎ অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ধর্মান্তরিতকরণের প্রচেষ্টার প্রবণতা সে সব জায়গায় দেখা যায়। কিন্তু মূল কথা হলো কোনো প্রলোভনে কোনো ধর্মান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করা সম্ভবত সব সমাজেই আইনত নিষিদ্ধ। সেটি করা ঠিক নয়। তাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ চললে, অশুভ শক্তিরা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিলেও সমস্ত রকমের অশুভ শক্তির বিনাশ হবেই। দেশ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব। এতে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর অরুণ কুমার গোস্বামী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাপান স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলি নোমান।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনার আলোকে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ও শত্রু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর আলোকপাত করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান মিত্রদেশ ভারতে প্রাণ বাঁচাতে ১ কোটি বাঙালি আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল, তখন ভারত মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে।
আগামীর বাংলাদেশ সম্প্রীতি ও মানবিকতার বাংলাদেশ উল্লেখ করে অধ্যাপক ডক্টর জিনাত হুদা বলেন, বিজয়ী বাংলাদেশকে মেরামত করা যায় না। যারা মেরামত করতে চেয়েছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রকে যারা শেষ করে দিতে চেয়েছেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন, তারা কখনোই সফল হবে না।
একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে পৃথিবীর কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিশাল ভূমিকা রয়েছে।ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে কোন দেশ উন্নতি করতে পারেনি। যার উদাহরণ পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারায়। সুতরাং, কোনও ধর্মীয় বিভাজন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করেছি, সবাই তার সুফল ভোগ করবো। মিলেমিশে দেশটিকে গড়ে তুলব।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে