Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার পাতাল-উড়াল মিলে আসছে ৩১ কিমি মেট্রোরেল

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:০৯

ঢাকা: আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন মেট্রোরেল। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার চালু হয়েছে, তার পুরোটাই উড়াল পথ। এবার শুরু হতে যাচ্ছে পাতালে রেলপথ নির্মাণের কাজ। যদিও এমআরটি লাইন-১ নামে এই প্রকল্পের আওতায় আরেকটি রুটে উড়াল পথও থাকবে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ২৬ জানুয়ারি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এই রেলপথ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

ডিটিএমসিএল সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের একটি খালি প্লটে লাইন-১ এর আওতায় পাতাল ও উড়াল রেল নির্মাণের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম ভূঞা বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে করার কথা থাকলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এই স্থানে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, একটি ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আর এর মধ্য দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

যেমন হবে এমআরটি লাইন-১

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল’র ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রেলের যে অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলবে সেটিই পাতাল রেল নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে। এই পথে থাকবে দুটি রুট। একটি বিমান বন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। যার দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। এই রুটে মোট পাতাল স্টেশন থাকবে ১২টি। বিমানবন্দর- কমলাপুর রুটই হবে দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ। মেট্রোরেলের মতো এটিও হবে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন এবং যা হবে দূর নিয়ন্ত্রিত। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুট পুরোটাই মাটির নিচ দিয়ে যাবে।

আর দ্বিতীয়টি হবে নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত, যাকে পূর্বাচল রুটও বলা হবে। দ্বিতীয় অংশের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। এর পুরোটাই যাবে উড়াল পথে। এই পথে স্টেশনের সংখ্যা মোট নয়টি। পাতাল-উড়াল মিলিয়ে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পর পর। এই ৩১ কিলোমিটার পথে চলবে ২৫টি ট্রেন। যার প্রতিটির একবারে তিন হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে।

পাতালপথে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, হাতিরঝিল, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলখেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ ও বিমানবন্দরে স্টেশন থাকবে। প্লাটফর্মে ওঠা-নামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর। তথ্যানুযায়ী, নতুন বাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের সঙ্গে আন্তঃলাইন সংযোগ থাকবে। নর্দা ও নতুন বাজার স্টেশন আন্তঃসংযোগ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।

কাজের অগ্রগতি

সূত্র মতে, এমআরটি লাইন-১ এর স্টাডি, সার্ভে, ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশের ডিপো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্টেশনের জমি অধিগ্রহণ কাজ চলমান। ২০২২ সালের অক্টোবর এ কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগের জন্য চুক্তি সই হয়। এ লাইনে প্রতিদিন প্রায় ১৯ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। লাইনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট। যা এখন লাগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে লাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে ২০২২ সালে কাজ শুরুর কথা থাকলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা ফের পিছিয়ে যায়।

পরিকল্পনায় আরও যা রয়েছে

রাজধানীর যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ছয় ধাপে মেট্রোরেল নির্মার্ণের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ছয়টি ধাপ রয়েছে। এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫, এমআরটি লাইন-২, নর্দার্ন ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-৪। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। যা ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫ এই তিন লাইন যথাক্রমে ২০২৫ সালের জুন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে এমআরটি লাইন-১ ও ৫ এর কাজ শেষ হতে ২০৩০ সাল লেগে যেতে পারে।

নির্মাণ হবে আরও মেট্রো রেলপথ

২০২৮ সালের মধ্যে রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং সাত কিলোমিটারে পাতাল রেলপথ নির্মাণ হবে। এই রুটের মোট ১৪টি স্টেশনের মধ্যে নয়টি উড়াল পথে আর পাঁচটি স্টেশন থাকবে পাতাল পথে।

এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুট নামে পরিচিত এই অংশের সার্ভে কাজ চলছে এখন। ২০২৮ সালে লাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ডিএমটিসিএল’র কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ২০৩০ সালের আগে শেষ হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫-এর নির্মাণ কাজ যদি শেষ করা যায় তাহলেও রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।’

যাত্রী নিয়ে চলছে এমআরটি-৬

রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল পথ নির্মাণের উদ্যোগের সূচনা হয় এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয় প্রথম ধাপে। উত্তরা থেকে আগাঁরগাও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের উদ্বোধন করা হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে মেট্রোরেল। সূত্র বলছে, আগামী বছরের শেষ দিকে চালু হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল। এরপরের ধাপে নির্মাণ হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। আর এতে সময় লেগে যাবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

পাতাল-উড়াল মেট্রোরেল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর