ঢাকা: দেশের নাগরিকদের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে ২২টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দেশের ৪টি বিভাগে ১৩টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ৪৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এসব কথা বলেন। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দেশের প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’ স্থাপন কার্যক্রম অংশ হিসেবে তৃতীয় পর্যায়ে এসব সেন্টারের উদ্বোধন করা হলো।
ড. মু. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রান্তিক জনগণকে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তার পাশাপাশি অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার ফলে আবার স্বাস্থখাত ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে ১৪ হাজার ১৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক ২০০৯ সাল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবার মান বিস্তৃত লাভ করেছে। দেশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩৮ হাজার থেকে ৬৮ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত লাভ করেছে।’
সচিব বলেন, ‘দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ১৪টি থেকে ৩৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে ২২টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর এক অনুগত দর্শন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। যা বিশ্বব্যাপী প্রসংশা কুড়িয়েছে।’
কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম বিষয়ে চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কমিউনিটি ভিশন এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখছে। দেশের ৪টি বিভাগে ১৩টি জেলায় ৪৫টি উপজেলায় ৪৫টি নতুন কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপিত হতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে চক্ষু পরীক্ষার সকল আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ কমিউনিটি ভিশন সেন্টার করা হয়েছে, যেখানে দেশ ও বিদেশের সিনিয়র চিকিৎসকসহ নার্সরা আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে বিনামূল্য সকল প্রকার চিকিৎসা দেওয়া হয়। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৫৭৭ জন রোগীকে চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দুই লাখ ১০ হাজারের অধিক রোগীকে পাওয়ার চশমা দেওয়া হয়েছে। ১২ হাজার ৪০০ এর অধিক রোগীকে অস্ত্রপাচারসহ অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ৬৫টি সেন্টার চালুর কর্যক্রম চলমান আছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব আজ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় আজ চিকিৎসা সেবা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার পৌঁছে গেছে। কমিউনিটি সেন্টারের ফলে মানুষ উপকৃত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।