‘জাতির স্বার্থেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে থাকে’
২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৮
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির গুরত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির সন্তান ইনান ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ২০১৯ সালে স্নাতক এবং ২০২১ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজে ভর্তি হন। বর্তমানে সেখানে তিনি এমবিএ করছেন। ইনান সদ্য বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন। তার আগে এফ রহমান হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ছাত্রলীগের রাজনীতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট রাহাতুল ইসলাম রাফি। তাদের সেই কথপোকথনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে তুলে ধরা হলো—
সারাবাংলা: সদ্য নেতৃত্বে এসেছেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার সু্যোগ আছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারবে বলে মনে করছেন?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশের আপামর শিক্ষার্থী-জনতার আশা-ভরসা, আনন্দ-বেদনার, সুখ-দুঃখের প্রত্যক্ষদর্শী ও হৃদয়স্পর্শী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। জন্মলগ্ন থেকেই এই সংগঠনটি তাদের কর্মসূচি ও সাংগঠনিক পরিধি নির্ধারণ করেছে শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় কাজ করে এসেছে, করছে এবং সামনেও করবে। একাডেমিক বা প্রশাসনিক হোক, আবাসনকেন্দ্রিক সমস্যা হোক, গবেষণাসংশ্লিষ্ট প্রয়োজনে আধুনিক লাইব্রেরি-বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হোক— শিক্ষার্থীদের সবধরনের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পাশে থাকবে।
সারাবাংলা: ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের মূল কাজ তো ছাত্রদের অধিকার নিয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক হওয়া উচিত। ডাকসু কিংবা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আপনারা ‘নির্বাচন চাইছেন’, ‘ছাত্রপ্রতিনিধি চাইছেন’ বললেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না কখনো। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী একটি সংগঠন। শিক্ষার্থীদের মাঝে গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশ হোক— বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এটি চায়। আমরা চাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংসদ নির্বাচন হোক, ছাত্রপ্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলুক। কিন্তু নানান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ প্রশাসন ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নানান জটিলতার সম্মুখীন হন। তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে বদ্ধপরিকর। আমরা প্রশাসনকে সবসময় অনুরোধ করি। কখনও কখনও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে চাপও প্রয়োগ করছি।
সারাবাংলা: সম্প্রতি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্ররাজনীতির চেয়ে জাতীয় রাজনীতিতেই বেশি মনোযোগী নয় কি ছাত্রলীগ?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-তরুণদের যত অর্জন, তার সবকিছুরই অগ্রসেনা ছাত্রলীগ। এখনও জাতির যেকোনো সংকটে, ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অগ্রসেনা হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে একটি রাজনৈতিক চক্র বাংলাদেশে পাকিস্তানি উগ্রবাদী-মৌলবাদী চর্চার বিস্ফোরণ ঘটাতে চায়। তাদের এই অশুভ অপতৎপরতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনোই কার্যকর হতে দেবে না। কেউ জনহয়রানিমূলক, ধ্বংসাত্মক কাজ করলে তাদের প্রতিহত করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময়ের মতো রাজপথে থাকবে। এই বিষয়টিকে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। জাতির স্বার্থেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে থাকে এবং এই ধরনের কর্মসূচি দেয়।
সারাবাংলা: আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা, ১১টা কিংবা দুপুর ৩টায় অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক সময়। অর্থাৎ অ্যাকাডেমিক সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচি থাকে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: একজন শিক্ষার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী ছাত্রসংগঠন করতে পারেন। আমরা আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ সময়েই দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার ফাঁকে পড়াশোনাকে প্রাধান্য দিয়েই এই কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেয়। একাডেমিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কেউ কর্মসূচিতে অংশ নেবে— এমন কোনো বিষয়ে আমরা কাউকে উৎসাহিত করি না; বরং নিরুৎসাহিত করি।
সারাবাংলা: ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচিগুলোর একটি ছিল প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক। এক্ষেত্রে ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের’ মানদণ্ড কী? সুনির্দিষ্টভাবে যদি জানতে চাই, ছাত্রদল এদের মধ্যে পড়ে কিনা?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি সংগঠন। এই সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সকল ছাত্রসংগঠনকে সঙ্গে নিয়েই সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃঢ় প্রত্যয়ী। আর ছাত্রদল প্রসঙ্গে বলব, তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এবং জাতির পিতার আদর্শকে মেনে নিয়ে ছাত্ররাজনীতি করতে চায়, তবে তাদের আমরা স্বাগত জানাব। কেউ যদি মৌলবাদীগোষ্ঠীর তাবেদার, বিদেশি অপশক্তির মদদপুষ্ট হয়ে এই রাষ্ট্রে অপতৎপরতা চালাতে চায়, তাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কঠোরভাবে জবাব দেবে।
সারাবাংলা: ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে এই সংগঠনটিকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসেই ঢুকতে না দেওয়া, কিংবা ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া— এগুলো কি সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার পথে সাংঘর্ষিক নয়?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীবান্ধব সংগঠন। শিক্ষার্থীদের প্রাণের ক্যাম্পাসে যাতে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্রলীগ সবসময় সজাগ থাকে। কেউ কেউ যখন এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রলীগ তা প্রতিহত করে। আমরা সমন্বয়ে বিশ্বাসী, শান্তির সুবাতাসে বিশ্বাসী। আমরা কখনোই পশ্চাতপদতায় বিশ্বাসী নই। আপনারা দেখেছেন, করোনার দুঃসময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মানুষের পাশে থেকেছে। সম্প্রতি সিলেটে হয়ে যাওয়া বন্যা পরিস্থিতিতেও সর্বাগ্রে ছাত্রলীগ এগিয়ে এসেছে।
সারাবাংলা: ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটিকালীন বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এসব ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা কী?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় বদ্ধপরিকর। একসময় ক্যাম্পাসগুলোতে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক গুলি ফুটতো। রাতের বেলা গুলির শব্দ শুনে শিক্ষার্থীদের ঘুমাতে যেত, গুলির শব্দেই তাদের ঘুম ভাঙত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভয়-ভীতির পরিবেশ বিরাজমান ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অভুতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে।
সারাবাংলা: র্যাগিংসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে নেতাকর্মীদের সাময়িক বহিষ্কার করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে কিছুদিন পর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার রীতিই বেশি। সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি কি তবে সাময়িক চাপ সামলানোর উপায়?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: না, বিষয়টি এমন নয়। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে অনেককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে যখন তিনি অভিযোগ খণ্ডান কিংবা ছোটোখাটো ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন— এমন সব ক্ষেত্রেই সাময়িক বহিষ্কার তুলে নেওয়া হয়। এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া।
সারাবাংলা: সদ্য বিদায়ী কমিটি নিয়ে নানান ধরনের আলোচনা-সমালোচনা-অভিযোগ ছিল। বিশেষত, তৃণমূলকে ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে এনে ফেলা। এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: এই ধরনের রাজনীতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কখনো ছিল বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই ধরনের সংস্কৃতি চর্চার কোনো সুযোগ এই সংগঠনে নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো— আপনারা নিজ নিজ ইউনিটে থেকে রাজনীতি করবেন এবং কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
সারাবাংলা: সারাবাংলার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম