Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এতদিন কোথায় ছিলেন?— ‘মায়ের কান্না’র উদ্দেশে ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:০৬

ঢাকা: ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে সামরিক আদালতের রায়ে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব অফিসারদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ গোপনে কার্যকর করা হয়েছিল, তাদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’র উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এতদিন কোথায় ছিলেন?

‘এটা তো স্বাভাবিক কথা। সশস্ত্রবাহিনীতে যখন বিদ্রোহ হয়, যখন কেউ ক্যু করার চেষ্টা করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের বিচার হয় সামরিক আদালতে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক হিসেবে পরিচিত করবার জন্য সরকার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারে নাই, কিছুতেই পারে নাই। এখন নতুন একটা কাজ শুরু করেছে। নাম দিয়েছে ‘মায়ের কান্না’।”

তিনি বলেন, ‘১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীর কিছু বিভ্রান্ত সৈনিক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানে তারা ১৭ জন অফিসারকে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। তাদের সামরিক আদালতে বিচার হয়েছিল। সেই বিচারে অনেকের সাজা হয়েছিল। এতদিন পর তাদের (সাজাপ্রাপ্তদের স্বজন) সামনে এনে…। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িও ঘেরাও করে ফেলেছে।’

‘এখন এ সমস্ত কথা বলে জিয়াউর রহমানকে খাটো করার ষড়যন্ত্র করছে। কোনো লাভ হবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান এই দেশের চেহারা বদলে দিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে। একেবারে সাড়ে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে। সে কারণেই জিয়াউর রহমানের আদর্শ সামনে রেখে, বেগম খালেদা জিয়ার লড়াকু জীবন সামনে রেখে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কথা বলা এই পাঁচ/ছয় মিনিটে সম্ভব নয়, এটা প্রায় অসম্ভব কাজ। আমি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং আমাদের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে— আমি যাকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বলি, যিনি সারাটা জীবন ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন, লড়াই করেছেন এবং এখনও গৃহবন্দি অবস্থায় গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্য লড়াই করে চলছেন, আমাদের সেই মহান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এমন একটা সময় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সমগ্র জাতি একটা কারাগারে আবদ্ধ হয়ে আছে। ৫০ বছর আগে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে মুক্তবাতাসের স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে একটা দানব সরকার আমাদের ওপর পাথরের মতো চেপে বসে আছে। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি। এই সময়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। তাকে সামনে রেখে আমরা আমাদের এই যাত্রাপথ সহজে অতিক্রম করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যারা ক্ষমতায় বসে আছে, তারা জাতির সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে ১৯৭৫ সালে এক দলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে কেটে-ছিঁড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়ে মাত্র ১১ মিনিটে পার্লামেন্টে শেখ মুজিবুর রহমানে নেতৃত্বে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। সমস্ত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিল, সমস্ত পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। সাংবাদিকরা সেদিন কর্মচ্যুত হয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করেছেন। আজকে আবার ভিন্ন কায়দায় গণতন্ত্রের মোড়ক লাগিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে।’

‘অত্যন্ত সূক্ষ্ণভাবে তারা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ হরণ করে নিয়ে গেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের মূল চরিত্র। এই সময় শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘লন্ডনে নাকি সবচেয়ে বেশি বাড়ি কিনছে বাংলাদেশিরা। এরা কারা? এরা হলো নব্য ধনিক শ্রেণি— যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত। ওখাইনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এত বেশি সৎ ছিলেন যে, মারা যাওয়ার সময় তার নামে ব্যাংকে পাঁচ হাজার টাকাও ছিল না। সত্যিকার অর্থেই তার ছিল ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেস।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সারা দেশের মানুষ জানে আপনারা সম্পদ লুণ্ঠন করছেন, আপনারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। যাদের টয়েটা জুটত না, তারা এখন রোলস রয়েস গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, সেই আদর্শ নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে। তার যে অসাধারণ সাহস, প্রজ্ঞা, তার যে দূরদৃষ্টি, সেই দূরদৃষ্টিকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অনেক ভাই রক্ত দিয়েছে। তাদের সেই রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমাদের জেগে উঠতে হবে। আমার মকবুল ভাই, আমার সেই নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ভোলার ভাইয়েরা— যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের রক্ত ছুঁয়ে আমরা শপথ নিয়েছি- বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র না বানিয়ে ঘরে ফিরব না, বিজয় অর্জন না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বিএনপি মায়ের কান্না মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর