Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সর্বোচ্চ দামে সোনা, কমেছে বেচাকেনা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩৮

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মূল্যবান এই ধাতুটির দাম এখনও প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দাম বাড়তি থাকায় বাজারে কমেছে সোনার গয়নার বিক্রি। বিক্রেতারা বলছেন, জুয়েলারি দোকানে সোনার গয়নার বিক্রি আগের থেকে কমেছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, আগের চেয়ে বিক্রি অনেকখানি কমেছে। মাঝারিমানের গয়নার বিক্রিও নেই। সোনা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধনীশ্রেণি ব্যবহার না কমালেও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিয়েতে কমেছে সোনার গয়নার ব্যবহার।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা কিনতে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিপ্রতি ৮৯ হাজার ১৭১ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি পড়ছে ৭৬ হাজার ৪৫৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দফায় দফায় দেশে সোনার দাম বাড়াচ্ছে বাজুস।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে সোনার দাম এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববাজারে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৯১৫ ডলার। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি সোনার দাম ছিলো ১ হাজার ৯২০ ডলার। গেল বছরের নভেম্বরে সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ ডলারের কিছু বেশি। আর মার্চে সোনার দাম উঠেছিল ২ হাজার ডলারের বেশি। সব মিলিয়ে এখনও সোনার দাম বাড়তি রয়েছে বিশ্ববাজারে।

গোল্ড প্রাইজ নামের একটি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গত ৩০ দিনে সোনার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। ৬ মাসে বেড়েছে ১১ শতাংশ, ১ বছরে ৩ শতাংশ ও গত ৫ বছরে ৪৩ শতাংশ।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা কম। কোন কোন দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছে বিক্রেতারা।

বসুন্ধরা সিটির ভেনাস জুয়েলার্সের একজন বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতারা আগের মতো সোনার গয়না কিনছেন না। আগে ৫ ভরি কিনলে এখন প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে কিনছেন ২ ভরি। দাম বাড়ার কারণে এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। বিক্রি অনেক কমে গেছে।’

একই শপিং কমপ্লেক্সের সোনারগাঁও জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে যা বিক্রি করতাম তার ১০ ভাগের এক ভাগও নেই। অনেক ক্রেতা দাম দেখে চলে যাচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের আরেকটি জুয়েলারি দোকনের বিক্রেতা জানান, আগের চেয়ে বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ফারিহা জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী মজিবুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের মতো বেচাকেনা নেই। ক্রেতারা এসে ঘুরে চলে যান। দাম বাড়ার কারণে তারা এখন আর সোনার গয়না কিনছেন না।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমাদের দোকানে বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।’

বাড্ডা থেকে বসুন্ধরা সিটিতে এসেছে আরফানা। ভেনাস জুয়েলার্সের দোকানে সোনার গয়না দেখছিলেন। সেখানে কথা হলে আরফানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের মতো এখন আর সোনার গয়না কিনতে পারছি না। আগে টাকা জমিয়ে কোনো না কোনো গয়না কিনে রাখতাম। এখন কেনা যাচ্ছে না। ছোট কোনো একটি গয়না কিনতে গেলেই লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

একই দোকানে কথা হলে মতিঝিলের বাসিন্দা রিপা বলেন, ‘আগে কোনো গয়না কিনতে চাইলে অনেক ওজনের গয়না খুঁজতাম। এখন কম ওজনের গয়না কিনতে হচ্ছে। কারণ ওজনে এক আনার তারতম্য ঘটলেই দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এখন আধা ভরির স্বর্ণ কিনতেও কষ্ট হয়।’

শিমুল আহমেদ, সম্প্রতি তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে বিয়ে কয়েকবার পেছানো হয়েছে। যে পরিমাণ স্বর্ণ দেওয়ার কথা ছিল তা কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’

হিমেল হিমু নামের আরেক তরুণ জানান, বিয়েতে স্ত্রীকে ৫ ভরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় তা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। দাম বাড়ার সোনার গয়না কেনা নিয়ে এখন চিন্তিত রয়েছি।

ময়মনসিংহের একজন গৃহিনী হাবিবা খাতুন (৫০)। তিন ছেলের মধ্যে বড় দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। ছোট ছেলের বিয়ের গয়না গড়তে চান তিনি। হাবিবা বলেন, ‘বড় দুই ছেলের বিয়েতে দুই থেকে তিন ভরি করে গয়না দিয়েছি। এখন ছোট ছেলের জন্যে সেটি তৈরি করতেও বেশ কষ্ট হবে। এখন থেকেই সেটি ভাবিয়ে তুলছে।’

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস)’র সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিয়ের মৌসুম হলেও এখন কেনাবেচা হচ্ছে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা এখন আর আগের মতো গয়না কিনতে চাইছে না। সৌখিন যারা তারা কিছুটা কেনাকাটা করছে। মাঝারি মানের গয়নার বিক্রি একেবারেই নেই। ছোট গয়না কিছুটা বিক্রি হচ্ছ। বড় গয়না বিক্রি থাকলেও তা মোট বেচাকেনার ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। সবমিলিয়ে স্বর্ণের বাজারে এখন কেনাবেচা খুবই কম।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সোনার দাম বাড়ার কারণে গত বছরের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেচাকেনা কমেছে। স্বর্ণ কিনতে ক্রেতাকে যে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, সেটি এখন মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ছবি তুলেছেন: হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

গয়না বিক্রি বাজুস সোনার কেনাকাটা সোনার দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর