Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি জাপার, ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গাঁ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৪

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। পাশাপাশি এককভাবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি’র সভাপতিত্বে তার সংসদীয় কার্যালয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দলীয় ইস্যুতে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার ফলে জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ ক্ষমা চেয়েছেন জি এম কাদেরের কাছে—এমনটি জানিয়েছেন জাপার বৈঠক সূত্র।

বিজ্ঞাপন

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আজ জেলা জজ আদালতে যখন জিএম কাদেরের মিস আপিল খারিজ হয়ে যায়, তখন সংসদ ভবনে চলছিল জাপার সংসদীয় দলের বৈঠক। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বিকেল ৩টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলে।

রওশনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরসহ দলটির ১৮জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দলের অভ্যন্তরে গত সাড়ে তিন মাস ধরে চলা বিবাদ ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা করেছেন সবাই। আলোচনা শেষে ‘অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি ও মান-অভিমান’ ভুলে দলে ঐক্য ধরে রেখে এককভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের জ্লুাইয়ে এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন। দলে কয়েক দফা বিবাদের পর গতকালই প্রথমবারের মতো রওশনের ডাকে সাড়া দিয়ে সংসদীয় দলের বৈঠকে যান জিএম কাদেরসহ দলটির এমপিরা। রওশন নিজের স্বাক্ষরে চিঠি দিয়ে সবাইকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে জানান জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

বিজ্ঞাপন

সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে রওশন এরশাদ বলেন, ‘সবাইকে এক থাকতে বলেছি। ঐক্যবদ্ধ থেকে সবাইকে কাজ করতে বলেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা এককভাবেই অংশ নেব, সেভাবে সবাইকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছি।’

সংসদেও সবাই যেন উপস্থিত থেকে গঠনমূলক আলোচনা করেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় গঠনমূলক কথা বলেন- সেই নির্দেশনা দিয়েছি

বৈঠক শেষে জিএম কাদের বলেন, ‘উনি (রওশন) যে কাউন্সিল ডেকেছিলেন সেটি নিয়েই তো মূলত ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। যাক, সেটি কেটে গেছে। আজকের বৈঠকেও কয়েক দফায় কথা বলার আগে কী বলবেন, সে বিষয়ে কানে-কানে উনি আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। এর আগে ব্যক্তিগতভাবেও উনি আমাকে বলেছিলেন- তুমি দল চালাও, আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আসলে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো উনি যে নিজ বিবেচনায় করেছেন সেটি আমার মনে হয়নি। যাক, বৈঠকে সবাই দলের ঐক্যের উপরই জোর দিয়েছেন।’

তবে এই বৈঠকে রওশনপুত্র সাদ এরশাদ এমপি উপস্থিত ছিলেন না। দলের দুই কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, বৈঠকে তারা সবাই একদম খোলামেলা কথা বলেছেন। কার কী ভুল ছিল, কেন দলে বিবাদ- এনিয়ে তারাও সরাসরি কথা বলেছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে জাপার পথচলার ওপর তারা গুরুত্ব দিয়েছেন।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, ‘বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত হল- সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

বৈঠকের বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,‘আজকের বৈঠকে ম্যাডাম (রওশন) একা থাকায় (বিবাদ সৃষ্টির জন্য যাদেরকে সন্দেহ করা হয় তারা না থাকার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে) সবাই মন খুলে কথা বলেছি। নিজেদের মধ্যে যে দূরত্ব হয়েছে, সেটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমি নিজেও ওনাকে (রওশনকে) বলেছি- আপনি বিরোধীদলীয় নেতা থাকবেন, এ নিয়ে আমাদের কারোই আপত্তি ছিল না, এখনও নেই। আপনাকে ওই পদ থেকে সরানোর কথা আমরা চিন্তাও করি না। কিন্তু, হঠাৎ যখন আপনার নামে কাউন্সিল ডাকা হলো, আপনাকে প্রত্যাহারের অনুরোধ করলেও আপনি করেননি, তখন দলের অস্তিত্ব রক্ষায় বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে আমাদেরও একটি অবস্থান নিতে হয়েছিল। এখন যেহেতু আপনি কাউন্সিল বাতিল করেছেন, সে কারণে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে আমাদেরও আর কোনো কথা নেই। বিষয়টি শেষ।’

আপনার বক্তব্যের জবাবে রওশন এরশাদ কি বলেছেন, জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, ‘উনি বললেন- সব শুনলাম, যার মনে যা ছিল সবাই সব কথা বলেছ, এখন সবাই একসঙ্গে থাকো, ঐক্যবদ্ধ থাকো।’

চুন্নু জানান, সংসদে এমপিরা সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবেন বলেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরসহ উপস্থিত এমপিরা ফটোসেশনে অংশ নেন। এরপর রওশন কিছুক্ষণ অধিবেশনে যোগ দেন। জিএম কাদেরসহ অন্যরাও অধিবেশনে যান।

জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গাঁ: বৈঠক শেষে সবাই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পর জিএম কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের কয়েকজন এমপি বেরিয়ে আসেন। এসময় তাদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন দল থেকে বহিষ্কৃত ও সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও। পরে তারা সবাই বিরোধীদলীয় উপনেতার (জিএম কাদের) কার্যালয়ে যান। যাওয়ার পথেই জাপার অন্য এমপিরা রাঙ্গাঁকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন তিনি যেন জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চান।

কয়েক মিনিট পর জিএম কাদেরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে জাপার এমপি অধ্যাপিকা রওশন আরা মান্নান জানান, ভেতরে জিএম কাদেরের কাছে রাঙ্গাঁ ক্ষমা চেয়েছেন। তখন জিএম কাদের বলেছেন- ও (রাঙ্গা) আমাকে নিয়ে মিডিয়াতে অনেক কথা বলেছে, ওর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তো প্রেসিডিয়ামের সভায় হয়েছে। কাজেই এখানে কয়েকজন বসে তো সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডিয়াম সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জানা গেছে, রাঙ্গা ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে গতকালের সংসদীয় দলের বৈঠকেও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রওশন এরশাদও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বৈঠকে।

এ দিকে চেয়ারম্যান হিসেবে দল পরিচালনা এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জিএম কাদেরের ওপর আদালতের ‘অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা’ বহালই থাকল।

ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক নিষেধাজ্ঞা খারিজের আবেদন নাকচ করেছিলেন আগেই। সেই আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে জিএম কাদের যেই মিস আপিল করেছিলেন, সেটিও গতকাল বৃহস্পতিবার খারিজ হয়ে গেছে। ফলে, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থেকে গেল।

আদালতে আবেদন খারিজের পর জিএম কাদেরের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মিস আপিল রিজেক্ট করা হয়েছে। এর ফলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থেকে গেল। এর আগে আমরা যখন উচ্চ আদালতে গিয়েছিলাম, তখন উচ্চ আদালদের নির্দেশনা ছিল আমরা যেন নিম্ন আদালতের নির্ধারিত তারিখে সেখানে শুনানি শেষ করি। সেই অনুযায়ী ৯ জানুয়ারি শুনানি হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি রায় হওয়ার কথা থাকলেও ১৯ জানুয়ারি (গতকাল) পুনঃশুনানির দিন ধার্য্ করা হয়। পুনঃশুনানি শেষে জেলা জজ আদালতে আমাদের আবেদন খারিজ হয়েছে। আমরা নকলের জন্য আবেদন করেছি। নকল পাওয়ার পর আমরা হাইকোর্টে যাব। হাইকোর্টে ন্যায়বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।’

আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে জিএম কাদের টানা আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে চুপচাপ। গতবছরের ১ নভেম্বর থেকে শুধু দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই নয়, কার্যত রাজনীতির-ই বাইরে রয়েছেন তিনি। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে কোনো কার্যক্রমই করতে পারছেন না। কবে নাগাদ এই বাধা কাটবে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিষেধাজ্ঞা কাটবে কি-না, সেটি অনিশ্চিত।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, পীর ফজলুর রহমান এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, মো. রুস্তম আলী ফরাজী এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, বেগম শেরীফা কাদের এমপি, নাজমা আকতার এমপি।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

জাপার বৈঠক জি এম কাদের টপ নিউজ রাঙ্গাঁ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর