কমেছে খেজুর গাছ ও গাছি, সহজে মিলছে না সুস্বাদু রস
২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:১৯
বরিশাল: শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুরের রস এখন আর তেমন দেখা যায় না। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক নগরায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ এবং গাছের রস। এখন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমেছে গাছির সংখ্যাও।
একসময় বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রসের উপর নির্ভরশীল ছিল। অথচ দিন দিন কমে গেছে খেজুর গাছের সংখ্যা। ফলে শীতকালে দা-কাঁচি, একগাছি রশি, একদণ্ড বাঁশ ও কোমরে ঝোলানো হাড়ি নিয়ে গাছে উঠতে দেখা যায় না গাছিদের।
কয়েক বছর আগেও হেমন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটার প্রাথমিক কাজগুলো করার হিড়িক পড়ত। গায়ের পথে-ঘাটে, নদী বা পুকুরপাড়ে, বড় রাস্তার দুধারে বা খেতের আল ঘেঁষে শত শত গাছের শীর্ষভাগ বিশেষভাবে কাটতেন গাছিরা। ১৫-১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করতেন। আড়াআড়িভাবে বাঁধা বাঁশের দণ্ডে দাঁড়িয়ে কোমরে ও গাছে রশি পেঁচিয়ে ধারালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ কাটার দারুণ দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের কালেরকাঠি গ্রামের প্রয়াত আবু হানিফের ছেলে শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি তার বাবাকে রস সংগ্রহ করতে দেখেছেন সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন প্রচুর রস আসত বাড়িতে। খেজুরের গুড়ের গন্ধে মৌ মৌ করতে পুরো বাড়ি। কিন্তু বর্তমানে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। একসময় তারা কয়েকশ’ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। কিন্তু এ বছর মাত্র ২০-২৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে। প্রতিটি গাছ থেকে দৈনিক ৪-৫ কেজি রস বের হয়। কাঁচা রস বিক্রি করা হয় প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা।
প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে রস সংগ্রহ করে আসছেন বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামের খবির উদ্দিন। তিনি জানান, সাধারণত একটি খেজুর গাছের রসের উপযুক্ত হতে প্রায় ৫-১০ বছর সময় লেগে যায়। আর একটি গাছ থেকে রস পাওয়া যায় ২০-২৫ বছর পর্যন্ত। তবে প্রতিটি গাছে কী পরিমাণ রস পাওয়া যাবে, তা নির্ভর করে গাছির দক্ষতা এবং গাছের উপর।
স্থানীয়রা জানান, আগে শীত এলে সহজেই মিলতো খেজুরের রস। কিন্তু এখন সারা গ্রাম খুঁজেও কোথাও খেজুরের গাছ বা গাছি কারও সন্ধান পাওয়া যায় না।
সারাবাংলা/এমও