ঢাকা: প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো সবজিসহ নিত্যপণ্যর দাম। এ পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তের টিকে থাকাটাই যেন দায়। গত সপ্তাহের তুলনায় মাছ এবং শীতকালীন সবজির বাজারে দাম বেড়েছে লাফিয়ে। তবে গরু, খাসি, মুরগির দাম আগের মতোই আছে।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা কাঁচাবাজার ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
দেখা যায়, এই সপ্তাহে কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৬০-১৮০ টাকায়। পাবদা বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহে ৩৮০-৪০০ টাকা, যা আজ ৪৩০-৪৫০ টাকা। শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮০-৬০০ টাকা। শিং মাছ ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫২০-৫৫০ টাকা কেজি।
এছাড়া সবচেয়ে সস্তা পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, যা গত শুক্রবার ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। কৈ মাছ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ২৫০ টাকা। বোয়াল মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫২০-৫৫০ টাকা। রুই মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, যা গত শুক্রবার ছিল ১৮০-২২০ টাকা, চিংড়ি মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি, আগের সপ্তাহে ছিল ৪৮০ থেকে ৬৫০ টাকা।
বাড্ডা মাছবাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী সালাম আহমেদের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজকে বাজারে প্রায় অধিকাংশ মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকার মতো বেড়েছে। দিনদিন মধ্যবিত্তের পছন্দের পণ্যতে দামের প্রভাব পড়ছে। বাজারে দাম বাড়লেও বাড়ছে না বেতন-ভাতা। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও সেগুলো আর পরবর্তীতে কমে না। এখন রাজধানীতে মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
বাজারের মাছ বিক্রেতা রসুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছ বেশি আসে। কিন্তু শীত বেশি থাকায় বাজারে মাছ কিছুটা কম, যার কারণে দাম একটু বেশি। আবার দ্বিতীয় ইজতেমা শুরু হওয়ায় গাজীপুর এলাকাগুলোতে বেশি মাছ গিয়েছে। যার কারণেও বাজারে মাছের দামে প্রভাব পড়েছে।’
এদিকে বসুন্ধরা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের সবজির দাম বেশি। এই বাজারে প্রতি পিস ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩৫ টাকা, ব্রোকলি প্রতি পিস ৪০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা। গাজর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ঝিঙা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ২৫ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৪০, শশা প্রতি কেজি ৪০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
এছাড়া পটল প্রতি কেজি ১১০ টাকা, নতুন আলু প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিচ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সব সবজি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে বলে জানা গেছে।
সবজি কিনতে আসা বসুন্ধরা আবাসিকের বাসিন্দা আব্দুল হেকিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শীতের সবজিতেও স্বস্তি নেই। গত সপ্তাহে টমেটো কিনেছি কেজি ৪০ টাকা, আজ কিনলাম ৬০ টাকায়। সিম গত শনিবার কিনেছি ৬০ টাকায়, আজ কিনলাম ৭০ টাকায়। এছাড়া নতুন আলু আজকে কিনলাম ৩০ টাকা, গত সপ্তাহে ২৫ টাকা দিয়ে কিনেছি।’
দরবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ এই ক্রেতা আরও বলেন, ‘এখন যতই হিসাব করে চলেন না কেন আপনি চলতে পারবেন না। কারণ প্রতিনিয়ত বাজারে কিছু না কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। দেশে এখন কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমে না। কাউকে বললেও এখন আর লাভ হয় না। তাই যতদিন রাজধানীতে জীবন চলে এভাবে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হবে।’