‘চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে’
২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫০
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। এবার ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে দলের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি সহযোগী সংগঠনসহ উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যক্তিগত অনুভূতির পাশাপাশি রাজনৈতিক পথচলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সৈয়দ আবদুল আউয়াল। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়।
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার আপনাকে উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোনীত করেছেন? এই অর্জনকে কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাদের অভিভাবক। ব্যক্তিগতভাবে আমি মাতৃতুল্য জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। কারণ অনেক যোগ্য প্রার্থীও এখানে ছিলেন। এই পদে আসীন হওয়ার জন্য শেখ হাসিনা হয়ত আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। এই কারণে তিনি গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন। আমি মনে করি, মাননীয় নেত্রী আমার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করেছেন। আমি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রচারিক কাজে, দাফতরিক কাজে গত ৩০ বছর নেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি। প্রচার কাজে আমার যে অভিজ্ঞতা তার পুরোটা দলের জন্য দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করব।
সারা বাংলাদেশে ৭৮ সাংগঠনিক জেলা, আটটি মহানগরে দলের পক্ষ থেকে এমন প্রচার কর্মকাণ্ড চালাব যেন জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাস-নৃশংসতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ সম্পর্কে দেশের আপামর মানুষ জানতে পারেন। জামায়াত-বিএনপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিল, রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা দেউলিয়া হয়েছিল। তাদের ওইসব হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সচিত্র প্রচারকার্য চালানো হবে। পাশাপাশি আমাদের টিম ভিজ্যুয়াল জগতেও সাইবার প্রচারণা চালাবে।
সারাবাংলা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ধারাবাহিক বিজয় অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে বর্তমান কমিটির সামনে কী চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে বলে মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম: আমাদের কাছে বিএনপি পক্ষে যে সত্য ইতিহাস আছে তা আমরা জনসম্মুখে তুলে ধরব।বিএনপি ক্ষমতায় আসার যে দুঃস্বপ্ন দেখছে, তাদের এই দুঃস্বপ্ন কোনোভাবেই সফল হবে না। ওদের (বিএনপি) বিক্ষোভ-সমাবেশ ঘেরাও কর্মসূচির কোনো প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি না। আমার কথা হলো- ভোটে জিততে হলে জনমত তৈরি করতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হলে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হয়। সেই আস্থা বিএনপি-জামায়াত বেশ কয়েকবার হারিয়েছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রতি, আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি শেখ হাসিনার প্রতি জনমনের আস্থা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনা আস্থা অর্জন করেছে। দেশের মানুষ পাশে আছে বলেই আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়ে বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ অনিবার্যভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে।
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের এই আস্থা কীভাবে অর্জন হয়েছে বলে মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম: কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের দল, গণমানুষের দল। আওয়ামী লীগের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে সবসময় জনগণ থাকে। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের উন্নয়ন, জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে সফল হয়েছে। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে উন্নয়ন হয়নি। সর্বশেষ বাংলাদেশ মেট্রো রেলের জগতে প্রবেশ করেছে। এর আগে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু উপহার দিতে পেরেছি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট এখন চলমান। একদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যদিকে মানুষের সুখ-শান্তি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। গত করোনার সময়ও দেখেছি আওয়ামী লীগ সরকার একমাত্র রাজনৈতিক সরকার এবং দল হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখসারিতে থেকে দলের নেতাকর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাস্তবায়ন করেছেন। আপামর নেতাকর্মীরা করোনা ভুক্তভোগীদের কাছে ছুটে গিয়েছেন। মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।
অপরদিকে বিএনপি বিক্ষোভ-সমাবেশের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়, এটি তারা ভোটের জন্য করছেন না। ভোটের জন্য করলে তারা গ্রামগঞ্জে যেতেন, ভোট চাইতেন। ওরা ভোট চাইছে না। ওরা চায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ওরা ভোট চায় না, চায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। কিন্তু ওদের পতনের ডাকে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। যে কয়টা লোক ওদের সমাবেশে দেখা যায়, তারা বিএনপির বেনিফিশিয়ারি। তারা বিএনপির কাছ থেকে টাকা-পয়সা পেয়ে সমাবেশে আসে। তারা তাদের আদর্শে লালিতপালিত। এরা এন্টি আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থী। তবে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার আমরা কখনও আমাদের দেশকে পাকিস্তান হতে দেব না। পাকিস্তানের মতাদর্শ দেশে ফিরিয়ে আসতে দেব না।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই জায়গায় বিএনপিকে কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। বাংলার মানুষ দেবে না। আমরা বিএনপির যে কোনো অপকর্ম সন্ত্রাস, অপকৌশল রাজপথে প্রতিহত করব।
সারাবাংলা: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দলের সামনে আগামীতে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে মনে করেন?
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম: এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। পৃথিবীর অনেক দেশ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মন্দায় ভুগছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার কারণেই একমাত্র বাংলাদেশে আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহ- সবকিছু মিলে আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছি। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণতার কারণে আজকে বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশের জনগণ নিরাপদ। এই কারণে মনে করি, যে চ্যালেঞ্জেই আসুক, আমরা জাতি হিসাবে যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারব।
বর্তমান সংকট মোকাবিলা করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্ব যথেষ্ট। তার নেতৃত্বে এই দেশের যে কোনো সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। যেমন আমরা করোনা মোকাবিলা করেছি। এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্য ঠিক আছি এবং টিকে থাকব। চ্যালেঞ্জ থাকবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাব। সেই বিশ্বাস, সততা, পরিশ্রম, দেশপ্রেম; আওয়ামী লীগের মধ্যেই বর্তমান। আর কোনো দলের মাঝে নেই।
সারাবাংলা: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম