নির্মাণের ৩ বছর পরও হাসপাতালে চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা
২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৪
রংপুর: রংপুর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতালের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে রংপুর নগরীর সদর হাসপাতালের প্রায় দুই একর জমির ওপর অত্যাধুনিক শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু এখনও চালু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম। যদিও মহামারিতে এটিকে ব্যবহার করা হয় করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে। করোনার বিস্তার কমে আসায় ডেডিকেটেট হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও চালু হয়নি শিশুদের চিকিৎসা। তাই দ্রুতই সরঞ্জাম কেনা ও জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালটি চালুর দাবি রংপুরবাসীর।
রংপুরের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সাবেক সদর হাসপাতালের ১.৭৮ একর জমির মধ্যে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা মূল্যের সেই ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ সিভিল সার্জনকে হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে বছর করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শিশু হাসপাতালের ভবনটিকে ব্যবহার করা হয় করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে। কিন্তু করোনার বিস্তার কমে আসায় বন্ধ হয়েছে ডেডিকেটেট হাসপাতালের কার্যক্রম।
রংপুর বিভাগ শীতপ্রবণ এলাকা হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি এই অঞ্চলে। শীতের কারণে বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে প্রতিনিয়তই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশুরা। এরমধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ৭২টি শিশু শয্যা। যা রোগির তুলনায় অপ্রতুল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বেডেই ২ থেকে ৩ জন করে রোগি ভর্তি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সিসিইউ, আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮৬ জন। এদের বেশির ভাগ রোগীই শিশু ও বৃদ্ধ। এই ২০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১০৩ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে অনেকই বাড়ি ফিরছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে এসে ৩ দিন থেকে ভর্তি আছেন ৬ মাস বয়সী শিশু মোকাম্মেল। তার মা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে খুব বিপদে পড়েছি। প্রতিটি বেডে ২ থেকে ৩ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কোনো শিশুই কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। যদি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি চালু থাকতো তাহলে এতো ভোগান্তি হতো না। রংপুর মেডিকেলের উপর চাপ কমতো।’
রংপুর নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতালের। এই প্রেক্ষিতেই সরকার ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল তৈরি করে দেয় কিন্তু করোনার সময় এই হাসপাতালটি ব্যবহৃত হয় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে। এখন যেহেতু করোনা রোগী নেই এজন্য শিশু হাসপাতালটি চালু করা জরুরি।’
নবনির্মিত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য একটি কমিটি রয়েছে। সেখানে পদাধিকার বলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আহ্বায়ক ও সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে।
এদিকে প্রশাসনিক অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় জনবল পেলেই শিশু হাসপাতালটি চালু করা হবে বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে প্রয়োজনীয় জনবল ও প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য লিখিতভাবে জানানো হবে। আশা করছি অচিরেই ১০০ শয্যার বিশিষ্ট এই শিশু হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব হবে।’
রংপুরের সিভিল সার্জন শামীম আহমেদ বলেন, ‘লোকবল নিয়োগ হলেই শিশু হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব। আমরা এটি চালু করার জন্য প্রতিনিয়তই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যোগাযোগ করেছি। কর্তৃপক্ষও আমাদের কাছে এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।’
জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, ‘শিশু হাসপাতালটি স্বাস্থ্য বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। আমরা চেষ্টা করছি হাসপাতালটি দ্রুতই চালুর বিষয়ে।’
নবনির্মিত তিন তলা মূল হাসপাতাল ভবনের পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে তিন তলার সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার, ছয় তলার ডক্টরস কোয়ার্টার, স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। এছাড়াও রয়েছে বিদ্যুতের সাবস্টেশন ভবন। শিশু হাসপাতালের মূল ভবনের ১ম তলায় আছে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার, ল্যাব এবং শিশুদের বিনোদনের সুব্যবস্থা। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট এবং ৩য় তলায় ওয়ার্ড এবং কেবিন।
সারাবাংলা/এমও