রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে জাইকা
২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৭
ঢাকা: মিয়ানামায়ের বাস্তুচ্যুত রেহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে ক্যাম্প এলাকার অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে বড় অংকের ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এ অর্থে বাস্তবায়ন করা হবে ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসসিআরডি)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ১৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগণের (কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা) জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈষম্য দূরীকরণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার জাপানি ‘ওডিএ’ ঋণ প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ-চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাবলিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের জীবনযাত্রা উন্নয়নের চিন্তা করা হয়। এজন্য দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে সরকার ও জাপান সরকারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুন ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চল পাবলিক অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে এমআইডিআই উন্নয়ন করা হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন্যাত্রার মান উন্নয়নে অবদান রাখবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার ৫টি উপজেলা এবং তিনটি পৌরসভাকে প্রকল্প এলাকা হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বেল্ট বরাবর শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ২০১৪ সালে জাপান সরকার এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাসট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ বা বিগ-বি ধারনাটির উল্লেখ করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বেল্ট এবং এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য একটি রেজিওনাল নোড এবং ভেলু চেইন হাব হিসাবে ভূমিকা পালন করে। ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে লজিস্টিকস হাব পাওয়ার অ্যান্ড ইনার্জি হাব এবং ওয়াটার ফ্রন্ট ইন্ডাস্ট্রি হাব ইত্যাদি নির্মাণের জন্য সরকার মহেশখালি-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাকচার ডেভলপমেন্ট ইনেশিয়েটিভ (এমআইডিআই) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
এমআইডিআইয়ের উপর ভিত্তি করে, জাইকা মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করছে। এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এমআইডিআই এর প্রধান উন্নয়ন এলাকা কক্সবাজার একটি আঞ্চলিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং ভবিষ্যতে দেশের প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হযে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। এইভাবে মিযানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের আসার ফলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে এক অভাবনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে পরিস্কার পানীয় জল, স্যানিটেশন, বনভুমি ও কৃষি জমি উজাড়সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়ের সুযোগ কমেছে। ভবিষ্যতে জনসংখ্যা আরও বৃদ্ধির ফলে ট্রাফিক বৃদ্ধি, সড়ক ও সেতুর অবস্থার অবনতি, চিকিৎসা ও শিক্ষার সঙ্কটসহ সামাজিক পরিষেবার মানের অবনতি এবং বর্জ্য বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ১০১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বা ক্ষতিপূরণ, ৯৬.১০ কিলোমিটার সড়ক, ৩টি টাউনশিপ, ১৭.৮৬৩ কিলোমিটার খাল বা ক্যানেল উন্নয়ন, ১ হাজার ৩৫ মিটার ব্রিজ কালভার্ট, ১৯৬.৩৪ কিলোমিটার সড়কের পার্শ্বে ড্রেন এবং ৪টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে।
এছাড়া ১৯২.২০ কিলোমিটার সড়কের পাশে ফুটপাত, ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯০১ ঘনমিটার মটির কাজ, ২ হাজার ৯৭০ মিটার ঢাল সুরক্ষা, ৩টি বহুমুখি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ৯টি বাজার, একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৯টি গণশৌচাগার, ২ হাজার ৪০৯টি সড়ক বাতি, পানি সরবরাহ এবং ২টি পার্ক স্থাপন করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও