ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা হাফিজকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্তে রুল
২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৩
ঢাকা: ঢাকার গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসিক যোদ্ধা সৈয়দ হাফিজুর রহমানের নাম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় শহীদ সৈয়দ হাফিজুর রহমানের নাম তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব খুঁজে বের করতে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী কাউন্সিল গঠনে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক (ডিজি), মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (২২ জানুয়ারি) এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত সপ্তাহে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সৈয়দ হাফিজুর রহমানের নাম তালিকাভুক্ত করতে হাইকোর্টে রিটটি করেন আইনজীবী মো. বাকির হোসেন মৃধা।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে আইনজীবী মো. বাকির হোসেন জানান, স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও ক্র্যাক প্লাটুনের দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সৈয়দ হাফিজুর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া কেবল দুঃখজনকই না, লজ্জার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুনের একাধিক চরম ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ঢাকায় এক রাতে সফলভাবে ছয়টি স্থানে মাইন বিস্ফোরণে অসামান্য কৃতিত্ব আছে হাফিজুর রহমানের।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের নবম খণ্ডের ৪৮৩ ও ৪৮৫ পৃষ্ঠায় এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্ব উল্লেখ আছে।
গত বছর ২৮ নভেম্বর সৈয়দ হাফিজুর রহমানের ছোটো ভাই সৈয়দ মোসাদ্দেকুর রহমান ভাইয়ের স্বীকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তি চেয়ে মন্ত্রণালয় ও জামুকায় আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাই ওই আবেদনটি যুক্ত করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিটটি করেছি। শুনানি শেষে আদালত আজ রুল জারি করেছেন।
সৈয়দ হাফিজুর রহমানের বীরত্ব, স্বীকৃতি না পাওয়া নিয়ে গত বছর অক্টোবরে একটি ইংরেজি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘হাফ এ সেঞ্চুরি গন/চেসিং রিকগনিশন (Half a century gone chasing recognition)’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য হাফিজুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা আট বার আবেদন করলেও প্রতিবারই আবেদন বাতিল হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকার আরবান গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। পরিচিত ছিলেন গেরিলা হাফিজ এবং মাইন হাফিজ নামেও।
মুক্তিযুদ্ধের জুলাই-আগস্ট মাসে গাজী গোলাম দস্তগীর, বীর প্রতীকের নেতৃত্বে অপারেশন উলন পাওয়ার স্টেশনে অংশ নিয়ে সফলভাবে ৩০/৪০/৫০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন হাফিজ। যে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল ঢাকার গোটা পূর্বাঞ্চল। বীর প্রতীক হাবিবুল আলমের লেখা ব্রেভ অব হার্ট বইয়ে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ২৯ আগস্ট রাতে সৈয়দ হাফিজুর রহমানের ২০/ নিউ ইস্কাটনের বাড়িতে রেইড চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। সেই বাড়িতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ খুঁজে পায়। ক্র্যাক প্লাটুনের ধরা পড়া বাকি গেরিলাদের মতো হাফিজুর রহমানকেও নেওয়া হয় এমপি হোস্টেল সংলগ্ন মিলিটারি টর্চার সেলে। সেখানে তার ওপর চালানো হয় চরম পৈশাচিক নির্যাতন। তার দুই চোখ উপড়ে হত্যা করেন পাকিস্তানি সৈন্যরা।
সারাবাংলা/একে