ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, নিয়ন্ত্রণে নেই নতুন উদ্যোগ
২২ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৪২
ঢাকা: সুইজারল্যাণ্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক বায়ু দূষণ পরিমাপক সংস্থা একিউএয়ারের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী জানুয়ারির শুরু থেকেই অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস। এ মাসের প্রথমার্ধে মাত্র চার দিন বায়ু পরিস্থিতি ছিল অস্বাস্থ্যকর। আর বাকি ১১ দিন ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।
বায়ু দূষণের দিক থেকে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা প্রথম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী গত বছর ঢাকাবাসী মাত্র ৩৭ দিন ভালো মানের বায়ু সেবন করতে পেরেছে। আর ৫০ দিনের কাছাকাছি বায়ুমান ছিল হ্যাজার্ডাস বা মারাত্মক খারাপ।
একিউআইয়ের তথ্যানুযায়ী, শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ভালো বায়ু, ৫১ থেকে ১০০ পরিমিত, ১০১ থেকে ১৫০ সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০ এর অধিক হলে তা বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়।
ঢাকায় বর্তমানে (২২ জানুয়ারি অনুযায়ী) পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক বায়ুমানের নির্দেশিকা মাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৮ গুণ বেশি। স্বাস্থ্য সুপারিশে ঢাকার বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে— বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার, প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার, জানালা বন্ধ রাখা ও সাইক্লিং বা বাইরে ব্যায়াম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি কারণ হিসেবে যানবাহন ও আশপাশে কালো ধোঁয়া এবং নির্মাণকাজকে দায়ী করা হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ প্রকাশ এবং পরিবেশবিদ ও কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নতুন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার আশেপাশের ইটভাটা বন্ধ, পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় বায়ুমান পরবীক্ষণ কেন্দ্র (সিএএমএস) স্থাপন, বায়ুমান পর্যবেক্ষণ স্টেশন (সি-সিএএমএস) চালুসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭২ বছর ছয় মাস হলেও গবেষণা বলছে, টানা দূষণের ফলে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ অনুযায়ী বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় এটি প্রায় সাত বছর সাত মাস।
লাইফ ইনডেক্সের তথ্য মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস, ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে পাঁচ বছর চার মাসে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, দেশের সবকটি জেলাতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী আদর্শ মানমাত্রা থেকে অন্তত তিন গুণ বেশি ছিল।
বায়ু দূষণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এক সময় ঢাকায় টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের হলুদ রঙের বেবি ট্যাক্সি চলতো। ওই যানবাহনগুলো ডিজেল পুরোপুরি পোড়াতে পারতো না, ফলে প্রচুর পরিমাণ অদগ্ধ জ্বালানি থেকে যেত। আর এসব জ্বালানি থেকে প্রচুর পরিমাণ অদগ্ধ হাইড্রো কার্বন মিশে যেত বাতাসে। এছাড়া, এর থেকে ব্ল্যাক কার্বন তৈরি হতো, যার পরিমাণ ছিল মিটারে ৩০ থেকে ৪০ মাইক্রোগ্রাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘টু স্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করে ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন চালুর পর বর্তমানে ঢাকার বাতাসে ব্ল্যাক কার্বনের পরিমাণ কমে প্রতি মিটারে ৮ থেকে ১৫ মাইক্রো গ্রাম হয়েছে। শুধু ডিজেল নয়, যেকোনো ফসিল ফুয়েল পুরোপুরি না পুড়লে ব্ল্যাক কার্বন উৎপন্ন হয়। ঢাকায় মোট বায়ু দূষণের জন্য দায়ী পার্টিকুলেট ম্যাটারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসে গণপরিবহন থেকে, যা আগে এত উচ্চমাত্রায় ছিল না। বাকিটা আসে উন্নয়ন কার্যক্রম, ধুলা থেকে। এখন থেকে ২০ বছর আগেও কালো ধোঁয়া বের হলে গাড়িকে জরিমানা করা হতো। কিন্তু এখন আর তা দেখাই যায় না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেলের জ্বালানি দূষণ।’
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপস ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই চার মাস শুষ্ক মৌসুম। এই সময়ে বায়ু মানের ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। জুন থেকে আগস্ট মানে বর্ষা মৌসুমে বায়ুমান কিছুটা ভালো হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম মৌসুমে বায়ু দূষণের পরিমাণ সারা বছরের চেয়ে প্রায় ৬০ ভাগ বেশি হয়ে থাকে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া দৈনিক বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দিনের তুলনায় রাতে দূষণ বেশি হয়। দেশে রাত ১টায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি থাকে। অন্য পিকটি থাকে সকাল ৭টায়। ফলে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সময় প্রাতঃভ্রমণের উপযোগী নয়। এ সময় যেসব বাচ্চারা স্কুলে যায়, তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে। রাতে আন্তঃজেলা বাস-ট্রাক চলাচল করে, রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া হয় ও অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদন শুরু করে। এছাড়া সারা দিনের ক্যাপচার করা দূষিত বায়ুও রাতের বেলা রিলিজ হয়, ইটভাটা কাজ শুরু করে। ফলে রাতে অত্যধিক বায়ু দূষণ চলতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকালে যানবাহন চলাচলের ফলে সৃষ্ট দূষণ নতুন করে যুক্ত হয়ে মাত্রা বাড়ায়। ফলে সকালে যারা প্রাতঃভ্রমণ কিংবা অফিস ও স্কুলের উদ্দেশে বের হন, তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। বার বার বলার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি কানে তুলছে না।’
কামরুজ্জামান বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে আমরা বার বার বলে আসছি, যেন সাধারণ মানুষকে বায়ু পরিস্থিতি ডিসপ্লে করে জানানো হয়। এতে মানুষ সচেতন হবে। সাধারণত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ দিক পর্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মাইক্রো লেভেলের ধুলাবালি ঢুকতে না পারে এমন মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও বাপার পরিবেশ স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচি কমিটির আহ্বায়ক ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুসের প্রদাহ সৃষ্টি করে। এমনকি দূষিত পদার্থ লিভার ও কিডনিতেও পৌঁছে যেতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কে পৌঁছে নার্ভ ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ওজন লেয়ার ক্ষয়ের ফলে ক্যানসার, চোখের সানি সমস্যা দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এর থেকে রক্ষা পেতে রাস্তা ভিজিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, শুকনো ধুলা ঝারা যাবে না। গাড়ির যন্ত্রপাতি মানসপন্ন হতে হবে। বায়ু দূষণের কারণ চিহ্নিত করে দূর করা জরুরি কারণ স্বাস্থ্যহানী হলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে, সামগ্রিক উৎপাদন কমে যায়, মানুষের আয়ু কমে যায়। ফলে গরিব শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
টানা কয়েক বছর শীত এলেই বায়ু দূষণের শীর্ষে থাকছে ঢাকা। গত বছর পুরো জানুয়ারি মাসে একদিনও ভালো অবস্থায় ছিল না ঢাকার বায়ু। এ বছরও শুরু থেকেই খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে ঢাকার বাতাসের মান। যে কারণে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি, বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ঠান্ডা ও বায়ু দূষণের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বায়ু দূষণের কারণগুলো চিহ্নিত ও দূষণ রোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি।’
এদিকে, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদের ভাষ্য, ‘যেসব কারণে বায়ু দূষণ হয় তা বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ তার মতে, ‘দেশের বায়ু পরিস্থিতি অত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বিষয়টি তেমন না।’ তিনি বলেন, ‘ইটভাটা ও গাড়ির কালো ধোঁয়ার দূষণ, নির্মাণকাজের ফলে হাওয়া দূষণ বন্ধে চেষ্টা করছি আমরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করোনার সময় মাস্ক পরার যে অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, তা এখনও বিদ্যমান। এই অভ্যাস ধরে রাখলে বায়ু দূষণজনিত অসুস্থতা থেকেও কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।’
পরিবেশ দূষণের বিষয়ে সরকার সচেতন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বায়ু, পানি, খাদ্যে ভেজাল নিয়ে আলোচনা করি এবং এই দূষণ যেন না হয় তা নিয়ে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা দিতে পারে, কিন্তু বায়ু দূষণ তো ঠেকাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বায়ু দূষণ তো দেশের সব জায়গায় নেই। গ্রামে নেই, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি। সেটাই করছি এবং আগামীতেও করব।’
বায়ু দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ঢাকায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বায়ু দূষণে ফুসফুসের নানা রোগ হতে পারে। কিন্তু তার জন্য এখনই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কেউ যদি পরে, তাকে সাধুবাদ জানাই।’
এ বিষয়ে সংসদীয় জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদ সদস্যদের ফোরাম ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ’র সভাপতি তানভীর শাকিল জয় এমপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়ু দূষণ মোকাবিলায় আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য বায়ু দূষণ বেড়ে যায়। আবার আমাদের দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলায় ধুলোবালি বেড়ে গেছে। ফলে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জোর দেওয়া হলেও বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে সেটি করা হচ্ছে না। যদিও বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি জরুরি। ঢাকার চেয়ে কম বায়ু দূষণ রয়েছে এমন অনেক শহরের নাগরিক শীতকালে মাস্ক পরে বের হন, কিন্তু আমাদের দেশে তা দেখা যায় না। আমি মনে করি, এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার— যার নেতৃত্ব দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।’
দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শাকিল বলেন, ‘আমরা হুট করে বায়ু দূষণ কমিয়ে ফেলতে পারব না। আইন বা বিধি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে এই বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করব, যেন আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়।’
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম
একিউআই একিউএয়ার কিউএয়ার খুবই অস্বাস্থ্যকর ঢাকায় বায়ু দূষণ ঢাকার বাতাস বায়ু দূষণ বায়ুমান বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর