সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুটের বইমেলায় থাকছে ৮৯২ স্টল, ৩৮টি প্যাভিলিয়ন
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:১১
ঢাকা: এবারের অমর একুশে বইমেলার পরিসর বাড়ছে, বাড়ছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন সংখ্যাও। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে এবার মেলা আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
গত বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে মেলা আয়োজন করা হয়রেছিল। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিটসহ মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। মেলায় প্যাভিলিয়ন ছিল ৩৫টি। আর এবার মেলায় থাকছে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৯২টি স্টল ও ৩৮টি প্যাভিলিয়ন।
রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এরইমধ্যে অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে বাংলা একাডেমি। লটারির ড্র’র মাধ্যমে প্রকাশনী সংস্থাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ করা ইউনিট ও প্যাভিলিয়ন বুঝিয়ে দিয়েছে তারা। স্টল-প্যাভিলিয়ন বুঝে পাওয়ার পর রোববার রাতেই সাজসজ্জার কাজ শুরু করেছে প্রকাশনী সংস্থাগুলো।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চে সশরীরে উপস্থিত থেকে অমর একুশে বইমেলার উনচল্লিশতম আসর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্তিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
গতবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। এবার সেখান থেকে উত্তর দিকে সরিয়ে জলাধারের পশ্চিম পাশে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে রাখা হচ্ছে। বইমেলায় বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।
এবার একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ মিলে মোট ৪টি প্যাভিলিয়ন থাকছে বাংলা একাডেমির। এগুলোর মধ্যে ৩টি প্যাভিলিয়ন সাধারণ বইয়ের জন্য এবং ১টি প্যাভিলিয়ন শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য। এছাড়া সাহিত্য মাসিক পত্রিকা উত্তরাধিকারের জন্য ১টি স্টল থাকবে বাংলা একাডেমির।
এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। শিশু এবং অভিভাবকরা যাতে সহজে খুঁজে পায়, সে জন্য মেলায় প্রবেশ পথের কাছে শিশুচত্বর রাখা হচ্ছে। কোভিডের কারণে গতবছর মেলার শুরুর দিকে শিশুপ্রহর না থাকলেও এবার শুরু থেকেই থাকছে।
নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে গতবারে তুলনায় এবারের মঞ্চ হবে অনেক ‘বড়’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জলাধারের পশ্চিম পাশে পাম গাছের কাছে নির্মিতব্য এ মঞ্চ এবং প্যান্ডেলটি ‘আশ্রয় কেন্দ্র’ হিসেবেও ব্যবহার হবে।
অমর একুশে বইমেলা প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার এবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশ পথ ও ৪টি বের হওয়ার পথ থাকবে। বরাবরের মতো এবারও বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলার এলাকাজুড়ে কয়েক শ’ ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ধূলা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশা নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকছে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে, সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক বইয়ের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে।
এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত মিলে শতাধিক বই। এর মধ্যে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমির ‘জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২’ প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একইসঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধুর রচনা সমগ্র প্রথম খণ্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে ৩টা এবং শনিবার ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মেলার সার্বিক প্রস্তুতি এবং খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ। অবকাঠামো নির্মাণ শেষে সংশ্লিষ্টদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা সাজসজ্জার কাজ শুরু করেছে। নিরাপত্তা প্রাচীর ও প্রবেশ পথ নির্মাণ কাজ কিছুটা বাকি আছে। ওগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হবে। যেহেতু এবার মেলার পরিসর, স্টল ও প্যাভিলিয়ন সংখ্যা বেড়েছে, সেহেতু সময়ও একটু বেশি লেগেছে। তদুপরি আমরা মাঠ বুঝে পেয়েছি দেড়িতে। তার পরও সব কিছু ঠিকঠাক মতো এগোচ্ছে।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও