‘মেলার যে পাশেই দাঁড়ান না কেন, শেষ মাথা দেখতে পাবেন’
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৭
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম। পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ) বাংলা একাডেমি। অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সদস্য সচিব। প্রথম বারের মতো মহা এ কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব পেয়ে ‘ভালো কিছু’ করার মানসে বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনার বা পুনর্বিন্যাসের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন মেলা পরিচালনা কমিটির কাছে। কমিটি তার অনেকগুলো ধারণা বা অভিপ্রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের সারিগুলোর সুবিন্যস্তকরণ।
অমর একুশে বইমেলার বিগত আসরগুলোতে স্টল এবং প্যাভিলিয়ন এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছিল যে, মেলায় প্রথমবারের মতো আসা পাঠক, দর্শনার্থী, লেখক এমনকি প্রকাশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরাও স্টল ও প্যাভিলিয়ন খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হয়েছেন। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবার মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে, মেলার এক প্রান্তে দাঁড়ালে অনায়াসে অন্যপ্রান্ত দেখা যাবে। কাঙ্ক্ষিত স্টল ও প্যাভিলিয়ন খুঁজে পেতে কাউকে বেগ পেতে হবে না।
শুধু তাই নয়, বিশাল পরিসরে আয়োজিত এ মেলার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটপ্রান্তে যারা স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেতেন, তারা কেউ সন্তুষ্ট হতে পারতেন না। মেলার পুরো সময়টা মুখভার করে কাটাতেন তারা। এদিকটা বিবেচনায় রেখে এবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটপ্রান্তে কোনো স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ জায়গটা জুড়ে রাখা হয়েছে খাবারের দোকান। এমন অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম।
সম্প্রতি সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। কে. এম. মুজাহিদুল ইসলামের একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। নিচে সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সারাবাংলা: এবার মেলার পরিসর বাড়ছে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ, একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে এবার অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা হচ্ছে। গত বছর ছিল সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট। অর্থাৎ চার লাখ বর্গফুটের মতো পরিধি বাড়ছে।
সারাবাংলা: এবার স্টল ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা কত?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: এবার মেলায় অংশ নেওয়া মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬০৯টি। প্যাভিলিয়ন থাকছে ৩৮টি। এখন পর্যন্ত ৮৫৭টি স্টল চূড়ান্ত হয়েছে। কমিটির অনুমোদন পেলে টোটাল স্টল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যাবে।
সারাবাংলা: মেলায় র্যাব ও পুলিশের জন্য আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ থাকে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: না, শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস ও আনসারের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ থাকে। পুলিশ বা র্যাবের জন্য বাংলা একাডেমির কোনো আলাদা বাজেট থাকে না। আমরা একটু/আট্টু আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখি।
সারাবাংলা: গত বছর শুরুতে শিশুপ্রহর ছিল না। এবার থাকছে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: মেলা শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি বুঝে শিশু প্রহরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে শিশুদের জন্য এবার দারুণ একটা কর্নার নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশ পথের ওই পাশেই শিশু চত্বর।
সারাবাংলা: গত বছর মূল মঞ্চের আলোচক প্যানেল নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে নির্ধারিত টপিকে আলোচনা করতে বলা হয়েছে আলোচকদের। এবার কী হবে?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: আলোচক প্যানেল নিয়ে এবার সেরকম হবে না। আমাদের যে সংস্কৃতি উপবিভাগ রয়েছে, তারা এটা দেখাশোনা করছে। এবার সব কিছু ঠিকঠাক মতো হবে আশা করি।
সারাবাংলা: মেলায় খাবারের দোকান থাকছে কতগুলো?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: খাবারের দোকানের সংখ্যা সম্পর্কে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। মেলার একেবারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সাইডে কনফাইন্ড ফুডজোন থাকছে। এদের জন্য আলাদা জোন তৈরি করা হচ্ছে। এরা বাইরে আসতে পারবে না।
সারাবাংলা: গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: বুঝতেই পারছেন- এবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি খোলা, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। সঙ্গত কারণেই আমরা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা দিতে পারছি না। তবে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের পাশে যে খালি জায়গা রয়েছে, সেখানে গাড়ি পার্কিং করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
সারাবাংলা: এবার পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকছে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: বিশ্রামগার নয়, ‘আশ্রয়’ বা শেল্টার জোন- সেটা থাকছে। ‘লেখক বলছি’ এবং ‘মোড়ক উন্মোচন’ মঞ্চ- ওটা বিশাল পরিসরে করা হচ্ছে। গতবছর যেখানে ছিল সেখানেই। ওটাকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে। জায়গা তো নষ্ট করা যাবে না।
সারাবাংলা; ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকছে কি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: হ্যাঁ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকছে।
সারাবাংলা: স্বাস্থ্য সুরক্ষা পার্টনার কারা থাকছে?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: স্বাস্থ্য সুরক্ষা পার্টনার আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে কয়েকটা স্পনসরের জন্য আমরা পারমিশন দিই। ওরাই এগুলো দেখে।
সারাবাংলা: লিটল ম্যাগাজিন চত্বর কোথায় থাকছে?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মোড়ক উন্মোচনে সামনে।
সারাবাংলা: প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ কতগুলো থাকছে?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চারটি প্রবেশ পথ ও চারটি বের হওয়ার পথ থাকছে। একাডেমিতে দুইটি প্রবেশ পথ ও দুইটি বের হওয়ার পথ থাকছে।
সারাবাংলা: এবারের মেলায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ দিক কোনটি?
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: এবারের মেলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হলো মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের সারিগুলো এমনভাবে সন্নিবেশিত, আপনি যে পাশেই দাঁড়ান না কেন, শেষ মাথা দেখতে পাবেন। অতীতে এমন হয়েছে যে, মেলার স্টল খুঁজতে গিয়ে নম্বরটা মেলাতে পারছেন না। এবার মেলার এই মাথা থেকে ওই মাথা দেখা যাবে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ দেখতে পাবেন। স্টলের দুই সারির মাঝখানে প্যাভিলিয়ন থাকেছ। পর্যাপ্ত জায়গা রেখেই এটা করা হচ্ছে। আমরা ওই ধরনের গুচ্ছ-টুচ্ছ তে যাচ্ছি না। এতে জায়গাও কমছে না। জায়গা একই থাকছে। কারণ, এবার মেলার জায়গা অনেক বাড়ানো হয়েছে।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম