Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অসম লড়াইয়ে আছি, আমাদের প্রতিপক্ষ প্রবল প্রতাপশালী’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৯

ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা অসম লড়াইয়ের মধ্যে আছি। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী। তাদের হাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, তাদের হাতে বন্দুক, তাদের হাতে পিস্তল-গ্রেনেড। অবলীলাক্রমে তারা সেগুলো মারে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’র ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রুপরেখা ঘোষণা করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নয়াপল্টনের অফিসের সামনে মকবুল হোসেন (স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা) প্রকাশ্যে গুলি করে মারল। উল্টো মামলা দিলো আমাদের সাড়ে চারশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। তার মধ্যে আমান উল্লাহ আমানও এক নম্বর আসামি। আর আমরা আসামি না থাকলেও নাকি হুকুমদাতা-নির্দেশদাতা। তাই মূল বিষয়টা হচ্ছে— আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে, আমাদের জনগণকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, আমাদের রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হবে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখুন গণতান্ত্রিক যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ওরা (সরকার) ধ্বংস করেছে। পার্লামেন্ট! পার্লামেন্ট কী? এখন যে পার্লামেন্ট তারা তৈরি করেছে এটি কোনো পার্লামেন্ট? এটি একদলীয় একটি ক্লাব তৈরি করেছে। ইটস এ ক্লাব অব আওয়ামী লীগ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের গেটওয়ে হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা। নির্বাচন করে আপনি দেশ চালনার জন্য পার্লামেন্ট তৈরি করবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, তাই না? সেই নির্বাচনি ব্যবস্থাটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ ভোটই দিতে যায় না। ভোট দিয়ে কী হবে? ভোট তো আমার থাকবে না, আমার ভোট তো অন্যজন নিয়ে যাবে। এ জন্য যত কারসাজি করা দরকার তারা (সরকার) করেছে। কখনও ১৫৪ জনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ঘোষণা করে দেওয়া, কখনও যে তারিখে ভোট তার আগের রাতে ভোট নিয়ে নেওয়া, সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাদের পক্ষে নিয়ে তাদেরকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা। এভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে তারা নষ্ট করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চয় এটা (২৭ দফা রূপরেখা) জনগণের সামনে তুলে ধরব। এটি একটা ড্রিম। ড্রিম ছাড়া কখনও সফল হওয়া যায় না। আমরা স্বপ্ন দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে বলব, এ বিষয়ে সারাদিন ধরে ওয়ার্কশপ করুন। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পেশাজীবীদের নিয়ে মতামত নিয়ে আমরা যেন পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে পারি সে জন্য উদ্যোগ নেবেন।’

জনতার টেউ শুরু হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রত্যেকটা জিনিসের উত্থান-পতন আছে, সামনে আগানো, পেছানো ‍যাওয়া.. সেই টেউয়ের মতো। যে টেউ শুরু হয়েছে উত্তাল তরঙ্গের মতো, সমুদ্রের মতো এরা ভেসে যাবে। কারণ, এদের সঙ্গে জনগণ নেই, জনগণ থাকবে না। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি সেই ১০ দফার প্রথমেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকের কথায় আমি হতাশার একটু ছাপ পাই। কেন হতাশ হবে? আমরা তো সাকসেসফুল হচ্ছি, প্রতিটা স্টেপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি জেলে গেছি, আমি একা জেলে যাইনি তো। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছেন। তাদের মুখে আমি এতটুকু হতাশার ছাপ দেখিনি। কারণ, এ লড়াইটি শুধু আমার লড়াই নয়, এই লড়াইটি আমার দেশের লড়াই, এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার শুধু আমার জন্য নয়, সমগ্র মানুষের জন্য, জাতির জন্য।’

‘গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। কীভাবে? ওনারা বলেন, সেলফ সেন্সরশীপ করেন। সেলফ সেন্সরশীপ কেন করে? যারা মালিক তারা তো বিজনেস হাউজ। তাদেরকে ব্যবসা করতে হয়, তাদেরকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এবং প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজের সঙ্গে একজন করে গোয়েন্দা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী লিখবে, হেডলাইন কোনটা যাবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে না, সব কিছু নির্দেশ করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘চিন্তা করতে পারেন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা, ১০০ টা মামলা, হত্যা মামলা এবং আমাদের সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। এ রকম অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। আলোকচিত্রী সাংবাদিক শহীদুল আলমের ওপর নির্য্তনের কথা জানেন, সাংবাদিক রোজিনার নির্যাতনের কথা জানেন প্রতি পদে পদে নির্যাতন,গুম। তার পরও সাংবাদিকরা এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনগণের কথা বলছেন, মানুষের কথা বলছেন।’

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আমান উল্লাহ আমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম হাফিজ কেনেডী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুর রহমান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের ডা. রফিকুর ইসলাম বাচ্চু, এগ্রিকালরিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাবের আসাদুজ্জামান চুন্ন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

আওয়ামী লীগ সরকার টপ নিউজ ফখরুল বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর