Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্রুত পদোন্নতি হবে চিকিৎসকদের: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৫

ঢাকা: চিকিৎসকদের পোস্টিং, প্রমোশন, ট্রেনিং নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দূর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। সুতরাং, আগামী দিনগুলোতে পদোন্নতি দ্রুত হবে।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেমিনার রুমে এক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশের জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে চিকিৎসকদের চ্যালেঞ্জ’—শীর্ষক
গবেষণাটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে শেষ হয়েছে। গবেষণাটি করেন বিএসএমএমইউ পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান ও তার সহযোগী দল।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষক দলের প্রধান এবং পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান। পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চিকিৎসকদের পোস্টিং, প্রমোশন, ট্রেনিং নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। এই কিছু দিন আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি অনুমোদন করিয়েছি। যে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটি সরে গেছে। আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। সুতরাং, আগামী দিনগুলোতে পদোন্নতি দ্রুত হবে।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের সংখ্যা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নার্সের সংখ্যাও কম। এতে তারা কাজের চাপে থাকেন। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে, এটা থাকবেই। রাতারাতি দেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। তবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কিছু জায়গায় আনসার মোতায়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হাসপাতালেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ নেওয়ার জন্য একজন রোগী এক সঙ্গে ৪/৫টি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে যান। এটির সমাধান করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উপজেলায় নারী-পুরুষ চিকিৎসকদের সমতায়ন নিশ্চিতে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে।’ এ ছাড়া চিকিৎসকদের পদোন্নতি অটোমেশন করতে হলে চিকিৎসকদের ৪টি ক্যাডার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি কমিয়ে উন্নত সেবা দেওয়ার পরিবেশ তৈরি সম্ভব।

গবেষণায় বাংলাদেশের নয়টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্ভে চেকলিস্টের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, সুপারিনটেনডেন্ট ও মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথা পর্যালোচনা করা হয়। এ গবেষণাটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা থাকলেও শতকরা ৪১ দশমিক ২ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবাটি পাওয়া যায়নি। জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যথাক্রমে শতকরা ৮৮ দশমিক ৯ এবং ৪১ দশমিক ২ ভাগ ক্ষেত্রে এক্স-রে পরিষেবা পাওয়া গেছে। শতকরা ৮৮ দশমিক ৯ ভাগ জেলা হাসপাতাল এবং ৭৬ দশমিক ৫ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি পরিষেবা পাওয়া গেছে। শকতরা ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ১১ দশমিক ৮ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা পাওয়া গেছে। শতকরা ৭৭ দশমিক ৮ ভাগ জেলা হাসপাতালে এবং শতকরা ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী রোগীদের, অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া শতভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি, কোয়ার্টার সুবিধা থাকলেও জেলা হাসপাতালে এর উপস্থিতি শতভাগ ৪৪ দশমিক ৪ ভাগ। শতকরা ৫২ দশমিক ৯ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি, শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমিটরি ও কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে আরও জানানো হয়, অনুমোদিত পদের বিপরীতে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে শতকরা ৩০ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৬৩ ভাগ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে শতভাগ ৫১ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৭৭ ভাগ জুনিয়র-সিনিয়র কনসালটেন্ট শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে শতকরা ৬৫ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৩৮ ভাগ মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন পদ শূন্য রয়েছে। নার্সিং স্টাফ-মিডওয়াইফ পদের ক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে শতভাগ ১৫ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ২৫ ভাগ পদ শূন্য পাওয়া গেছে। জেলা হাসপাতালে শতকরা ৫১ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৪২ ভাগ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান পদ শূন্য। এ ছাড়া জেলা হাসপাতালে শতকরা ২০ ভাগ ক্লিনার পদ শূন্য থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য ক্লিনার পদের পরিমাণ শত ৬৬ ভাগ।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, প্রক্টর ও ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

টপ নিউজ দ্রুত পদোন্নতি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর