স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা
২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৬
ঢাকা: মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ২৫ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মাঠপ্রশাসনকে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ব্রতী হওয়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হয়। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন থাকছে। এর মধ্যে ২০টি থাকবে কার্য অধিবেশন।
প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা হলো-
১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। আর কোথায় কেন পতিত জমি না থাকে। অনাবাদি জমিকে আবাদ করতে হবে। প্রচুর অনাবাদি জমি আছে সারাদেশে। সেগুলি যদি আমরা চাষের উপযোগী করে ফেলতে পারি তাহলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন এবং বহুমুখীকরণ করতে কোনো সমস্যা হবে না।
২. নিজেরাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত।
৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে।
৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ একান্তভাবে দরকার, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করতে হবে।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে।
৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।
১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;
১২. সরকারি দফতরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে।
১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।
১৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয় সে লক্ষ্যে নজরদারি জোরদার করতে হবে।
১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।
১৮. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধ ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। সুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে এবং শেল্টার নির্মাণ করতে হবে।
২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে।
২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্রান্ডিং করতে হবে।
২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয় সেলক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
২৫. জেলার সব সরকারি দফতরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের সকলকে ব্রতী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনসাধারণ, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট শিল্প কারখানা সবকিছুতেই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার এবং স্মার্ট করে কিন্তু আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।’
জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন— ডিসি’দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে আগামী ২৬ জানুয়ারি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিসহ অনেকে।
করোনার কারণে দু’বছর সম্মেলন না হলেও প্রতি বছরই জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়ে আসছে। ডিসি সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের জেলা প্রশাসকরা মতবিনিময় করেন। এরপর তাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা, অনুশাসন ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা, নীতি ও অনুশাসন মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে গেলে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার ফলে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় মাঠপর্যায়ে তার ভিত্তিতেও বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব করেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে গত রোববার জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন থাকছে। তার মধ্যে ২০টি থাকবে কার্য অধিবেশন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও