‘মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইভিএম প্রকল্প স্থগিত’
২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:১৬
ঢাকা: দেশের মানুষের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা ও কৃষিকে অগ্রাধিকার দিতেই নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন আট হাজার কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিরোধীদলের একজন বলেছেন, বাংলাদেশে আর্থিক সংকটের জন্য ইভিএম প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। আর্থিক সংকট সারা বিশ্বব্যাপী আছে, আমাদেরও আছে। তবে এমন পর্যায়ে নেই যে, আমরা চলতে পারব না। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন হলো আজ। সম্মেলন শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। উল্লেখ্য, মাঝে করোনার কারণে দু’বছর সম্মেলন স্থগিত ছিল।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে দেশের উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘চাকরির অর্থ শুধু চাকরি করা না, জনসেবা দেওয়া। সেজন্য এই মন্ত্রণালয়ের নামটাও পরিবর্তন করে দিয়েছিলাম।’
সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আন্তরিকতা ছাড়া বা দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ ছাড়া কখনো সফল হওয়া যায় না। মানুষের জন্য মানুষ- সেটাই আপনারা প্রমাণ করেছেন। করোনাকালীন সময়ে বাবা-মা ভাই বোন বা নিজের ছেলেমেয়েই তো দূরে সরে গেছে। সেখানে আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংস্থা, আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের জন্য কাজ করা- এটাই সবচেয়ে বড় কথা। সেটা আপনারা সফলভাবে করেছেন। আর করেছেন বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে । কোভিড না এলে আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। তারপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধও বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।’
এ জন্য আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সবাইকে কৃচ্ছ্বতা সাধনের আহ্বান জানিয়ে বলেন ‘আমরা যদি সাশ্রয়ী হয়ে চলতে হবে। এতে হয়তো একটু ধীরগতি হবে। কিন্তু উন্নয়নটা অব্যাহত রাখতে পারব। সেটাই আমরা চাই।’
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি আসার পর আমাদের সরকারের কর্মকর্তাদের মাঝে জনমুখী, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সেবা দেওয়ার যে একটা আন্তরিকতা; সেই আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা যদি না হতো আজ দেশে যতটুকু উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি বা সফলতা পেয়েছি, সেটা কিন্তু সম্ভব হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসি। কারণ, আমাদের মেয়াদ তো মাত্র পাঁচ বছর। তারপরও বাংলাদেশে ক্ষমতা বদলের যে ধারা ছিল পঁচাত্তরের পর থেকে সেটা আর নেই। আগে এমন ছিল, কেউ হঠাৎ টেলিভিশনে এসে বলে দিল- আজ থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলাম। এরকম একটা দুঃসহ অবস্থা ছিল। অন্তত এটুকু বলতে পারি, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০২২ পর্যন্ত ওই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। যদিও চেষ্টা করা হয়েছে।’
অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক, এটাই বাস্তব কথা। আমরা যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাই বা আপনারাও সরকারি আমলা হিসাবে যে সুযোগ-সুবিধা পান এগুলোর অবদান তো জনগণের। জনগণের অর্থ, জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই তো সবকিছু চলে। সেই জনগণকেই অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলতে হবে। সে প্রচেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি।’
সারাদেশে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নতির বিভিন্ন প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের মাঝে এমন একটা মানসিকতা ছিল যে, বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না, তাদের পরামর্শ ছাড়া কোন উন্নতি করতে পারব না। যখন এই পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন উঠল, আর যখন ঘোষণা দিলাম নিজস্ব অর্থায়নে করব, এটা অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডকালীন যে অর্থনৈতিক মন্দায় সারাবিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যার ফলে আজ অনেক উন্নত দেশও নিজেকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের যাতে সেটা করতে না হয়, সেইজন্যই আমরা কৃচ্ছ্বতা সাধনের কথা বলেছি। আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিয়েছি। সেটার ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে যা খরচ লাগে সেটা করব। জনগণের চিকিৎসায় যা লাগে আমরা করব। বিনা পয়সায় আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশগুলোও তা দেয়নি।এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
উল্লেখ্য, ডিসি সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের জেলা প্রশাসকরা মতবিনিময় করেন। এরপর তাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা, অনুশাসন ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা, নীতি ও অনুশাসন মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে গেলে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার ফলে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় মাঠপর্যায়ে তার ভিত্তিতেও বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব করেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম