Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অসদাচরণ: নীলফামারী আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ ৩ জনকে তলব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:২১

ঢাকা: নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১–এর ‘আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে সশরীরে তলব করেছেন হাইকোর্ট। তিন আইনজীবীকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না এবং আদালত অবমাননার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আইনজীবীরা হলেন- নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজুল হক, সহসভাপতি মো. আজহারুল ইসলাম ও আইনজীবী ফেরদৌস আলম।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর এবং অপর আসামিদের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করেন নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১–এর বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার। এ আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ওই মামলায় নিয়োজিত তিন আইনজীবীসহ তাদের অপর সহযোগী আইনজীবীরা ‘মারমুখী ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে’ বিচারকের প্রতি বিভিন্ন উক্তি করে হামলা করার প্রয়াস চালান উল্লেখ করে বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি পত্র পাঠান।

ওই পত্রে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো ওই পত্রে বলা হয়, গত ২৮/১১/২০২২ খ্রি. আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণপূর্বক জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির জন্য ছিল। আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভিকটিম মোছা. মারুফা-কে পরীক্ষা অন্তে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। এবং অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন না-মঞ্জুরপূর্বক জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করি। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অত্র মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীগণ অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণপূর্বক হামলা করার প্রয়াস চালায়।

তারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না, নীলফামারীর বার খুবই ভয়ঙ্কর, এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টা পাল্টা আদেশ দাও।’

এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করাকালীন সময়েও ওই আইনজীবীরা জঘন্য ভাষায় বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহ-সভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। উক্ত সময়ে উপস্থিত অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসাবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি এবং উক্ত ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অপরাপর বিজ্ঞ বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়।

জেলা জজ গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। পরে গত ৩ জানুয়ারি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠাতে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

এর আগে বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের ঘটনায় খুলনা, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকদের তলব করে হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

অসদাচরণ টপ নিউজ নীলফামারী আইনজীবী সমিতি হাইকোর্টে তলব


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর