বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরের রেস্টুরেন্ট সরানোর দাবি
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৪
ঢাকা: পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের পশ্চিম প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্ক। ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মৃতিবিজড়িত এই পার্ক এলাকাবাসীর বিনোদন, শরীরচর্চা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র স্থান। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের ফলে এখানকার ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আবেদন করা হলেও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।
পার্কের ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, ‘১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মৃতি জড়িত রয়েছে বাহাদুর শাহ পার্কে। এর ভিতরে রেস্তোরাঁ চালু করে, চুলার মাধ্যমে আগুন জ্বালিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর প্রতিবাদে গত বছরের ১০ নভেম্বর ডিএসসিসি’র মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করি আমরা। ওই সময় বাহাদুর শাহ পার্কে চুলা জ্বলবে না এবং স্থাপিত রেস্তোরাঁর কাজ বন্ধ করে পার্কের পরিত্যক্ত জায়গায় রেস্তোরাঁটি স্থানান্তর করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইতিমধ্যে ইজারাদার ঘোষিত মেয়রের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পার্কের অভ্যন্তরে শহিদ বেদির সামনে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করে পরিবেশের ক্ষতি করছে।’
আক্তারুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহিদদের রক্তে রঞ্জিত এক ঐতিহাসিক স্থান। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক-স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। বিগত কয়েক মাস পূর্ব থেকে ডিএসসিসি’র অনুমোদনক্রমে পার্কের ভিতরে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে রাস্তা অবরোধ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন স্থানীয়সহ সর্বস্তরের মানুষ। এক পর্যায়ে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে গত বছরের ৩১ অক্টোবর মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসক, ৫ নভেম্বর ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য, ৮ নভেম্বর ডিএসসিসি মেয়র ও প্রধান সম্পদ কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরের ফটোকপিসহ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে অযৌক্তিক, অবিবেচনা প্রসূত, অপরিণামদর্শী ও ঐতিহ্য ধ্বংসকারী সিদ্ধান্তে অনড় থেকে ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে রেস্তোরাঁ চালু করার সুযোগ দিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখানে চুলার অগ্নিশিখায় পার্কের গাছপালা ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে বলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা শুধুমাত্র পার্কের ঐতিহাসিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। একইসঙ্গে জনগণের প্রতি অবলাও প্রকাশ করছে। দেশের সচেতন নাগরিকগণকে আমাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এ পার্কের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় অনুরোধ করছি।’
বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে দখল না করা, পার্কে পূর্বের মতো গোলাকার বেষ্টনি নির্মাণ এবং শহীদ মিনারের শীর্ষদেশে ১৮৫৭ সালের বীর শহিদদের স্মরণে লেখাটি পুনস্থাপনের দাবি বাস্তবায়নে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও সামাজিক নেতাদের সঙ্গে ৯ দিনের মতবিনিময় সভাসহ ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ।
এই সংবাদ সম্মেলনে সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল ছাত্তার, হাজী মো. মুজাহিদ ও মিরুজ্জামান খান মিরুসহ সংগঠনের বিভিন্ন সদস্যরাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরএফ/এনএস