Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গ্রন্থের’ ভারিক্কি থেকে বেরিয়ে এবারও অমর একুশে ‘বইমেলা’

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:১২

ঢাকা: কী আশ্চর্য! ২০২২ সালের আগে টানা চার দশক ধরে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলায়’ এসে ব্যাগ ভরে ‘বই’ কিনে ঘরে ফিরেছে মানুষ। ‘বইমেলা’ থেকে ‘বই’ কেনার সুযোগ পেয়েছে মাত্র বছর খানেক আগে! স্বস্তির খবর হলো— গ্রন্থের ভারিক্কি থেকে বেরিয়ে এবারও অমর একুশে ‘বইমেলা’ আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি।

ও… হ্যাঁ, ‘বই’ (Book) আর ‘গ্রন্থ’ শব্দ দুইটির মধ্যে পার্থক্যটা পরিস্কার করা দরকার। বই (book) শব্দটি বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। book শব্দটি ওল্ড ইংলিশ বা অ্যাংলো-স্যাক্সন শব্দ “bōc” থেকে আগত। এটি জার্মানিক শব্দমূল “bōc” হতে উদ্ভুত এবং প্রাসঙ্গিকভাবে Beech শব্দটির সাথে সমমাত্রিক। অনুমান করা হয় গোড়ার দিকের ইন্দো-ইউরোপীয়ান ভাষা বিচ (Beech) বৃক্ষে খোদাই করা হতো। সেই বিবেচনা থেকে Bukvar শব্দটির উৎপত্তি। একইভাবে ল্যাটিন শব্দ Codex এর আধুনিক অর্থ “পুস্তক বা বই (book)। এটিও বৃক্ষের সাথে সম্পর্কিত, যা মূলত বৃক্ষের বা কাঠের গুঁড়ি-কে বোঝায়। আর এভাবেই Book শব্দটি বর্তমান আকার লাভ করে। আর ‘গ্রন্থ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় সরাসরি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ পুস্তক।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা একাডেমিতে এসে ‘অমর একুশে স্মরণ সপ্তাহ’ এবং একাডেমির বই ৫০ শতাংশ কমিশনে বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ ঘটনাটিকে অমর একুশে বইমেলার ‘ভ্রুণ’ হিসেবে দেখা হয়। বাংলা একাডেমির এই যে বই বিক্রির আয়োজন, ১৯৭৯ সালে এসে তা ‘গ্রন্থমেলা’ নামে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। আর ১৯৮৪ সালে এসে গ্রন্থমেলার নাম হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ ১৯৭১ সালের ভ্রুণ থেকে পর্যাক্রমে বিস্তৃত হয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। মেলা আয়োজনে নানা মাত্রিকতা যুক্ত হয়েছে। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মেলা ‘গ্রন্থমেলা’ নামে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ১৯৮৪ সালে মেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ রাখা হয়েছে। আর ২০২২ সালে এসে মেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা করা হয়েছে’।

বিজ্ঞাপন

এই পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো কেন এবং পরিবর্তনের ফলে মেলার আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতায় কোনো ইতিবাচকতা যুক্ত হয়েছে কিনা?— এমন প্রশ্নের জবাবে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটা হয় নির্বাহী পরিষদের সভায়। গত বছর নাম পরিবর্তন হয়েছে। অবশ্যই মেলার আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত।’

মেলার উদ্যোক্তরা যে কারণেই নাম পরিবর্তন করুক না কেন, মেলার নাম ‘গ্রন্থমেলা’-র চেয়ে ‘বইমেলা’-ই জনশ্রেণির মুখে বেশি উচ্চারিত হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৪২ বছর ধরে মেলার নাম ‘গ্রন্থমেলা’ বা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ রাখা হলেও পাঠক, লেখক, প্রকাশক বা দর্শনার্থীরা ‘গ্রন্থমেলায়’ যায়নি, সবাই গেছে ‘বইমেলায়’।

একাডেমির ঘোষণা মঞ্চ থেকেও বলা হয়নি— ‘আজকে মেলায় নতুন গ্রন্থ এসেছ…টি’। বরং বরাবরই বলা হয়েছে, ‘আজকে মেলায় নতুন বই এসেছে…টি’। মেলা সংক্রান্ত বাংলা একাডেমির সংবাদ বিবরণী তৈরি হয়েছে ‘বই’ শব্দটা ব্যবহার করেই। আর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত মেলার খবরের শিরোনামগুলোতেও স্থান পেয়েছে ‘বই’ শব্দটি।

এমনকি গত বছর বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত মেলার ইতিহাস সংক্রান্ত বইটির নামও রাখা হয়েছে ‘অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস’। অথচ গত ৪২ বছর ধরে মেলার প্রবেশ পথ, ডিসপ্লেবোর্ড, মূল মঞ্চসহ সর্বত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দটি।

তবে এখন থেকে আর ‘গ্রন্থমেলা’র প্রবেশ পথ দিয়ে ‘বইমেলা’য় ঢুকতে হবে না পাঠক, লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের। তারা ‘বইমেলা’র প্রবেশ পথ দিয়ে মেলায় ঢুকে পছন্দের বই কিনে মনের আনন্দে বইমেলা থেকে ঘরে ফিরতে পারবেন।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা অমর একুশে বইমেলা বইমেলা ২০২৩ বাংলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর