Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২ কিশোরীকে খুনের দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কিশোরীকে খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে আরেক আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আলীম উল্ল্যাহ এ রায় দেন। দণ্ডিত আবুল হোসেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার মহাদেবপুর চৌধুরী পাড়ার মো. ইসমাইলের ছেলে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে গাফিলতি প্রমাণ হওয়ায় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ দিয়েছেন বলে জানান ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ।

২০১৮ সালের ১৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভার জঙ্গল মহাদেবপুর পাহাড়ে ত্রিপুরা পাড়া থেকে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় দুই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার পুলিশ। এরা হলেন- ত্রিপুরা পাড়ার পুলিন ত্রিপুরার মেয়ে সুকলতি ত্রিপুরা এবং সুমন ত্রিপুরার মেয়ে সবিরানী ত্রিপুরা।

ঘটনার পর চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা জানিয়েছিলেন, বখাটে আবুল হোসেন কিশোরী সুকলতিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ক্ষুব্ধ আবুল হোসেন সুকলতিকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে বন্ধু রাজীব ও মানিকসহ ত্রিপুরা পাড়ায় যায়। তারা সুকলতিকে গলায় নাইলনের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পাশের ঘর থেকে সবিরাণী ত্রিপুরা ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় সুমন ত্রিপুরা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো- আবুল হোসেন, ওমর হায়াত মানিক এবং মো. রাজীব।

বিজ্ঞাপন

মামলা দায়েরের পরদিন ১৯ মে পুলিশ আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। ওইদিনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে আবুল হোসেন জানায়, আম পাড়ার রশি দিয়ে আবুল হোসেন সুকলতিকে এবং রাজীব ও মানিক মিলে সবিরাণীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। ২০১৮ সালের ২৯ মে আসামি রাজীব দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হয়।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অশোক কুমার দাশ সারাবাংলাকে জানান, সুমন ত্রিপুরার দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি আবুল হোসেন ও মানিককে আসামি করে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। রাজীব মারা যাওয়ায় তাকে বাদ দেওয়া হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

২০২২ সালে মামলা বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার রায়ে আদালত আবুল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আবুল হোসেন ও ওমর হায়াত মানিক আদালতে হাজির ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল হোসেনকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠান আদালত। মানিককে দায়মুক্তির আদেশ দেন।

পিপি আরও জানান, বিচারে শুধুমাত্র আসামি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সুকলতিকে খুনের অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে। সবিরাণীকে খুনের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় মানিককে খালাস দিয়েছেন আদালত।

সবিরাণীকে খুনের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ার জন্য আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার উপ-পরিদর্শক সুজায়েত হোসেনকে দায়ী করেছেন। তদন্তে গাফিলতির কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামি আবুল হোসেন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে সুকলতিকে খুনের দায় স্বীকার করেছে। জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে, রাজীব ও মানিক মিলে সবিরাণীকে খুন করেছে। রাজীব মারা গেছে। মানিককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তদন্তের সময় টিআই প্যারেডের (শনাক্তকরণ মহড়া) কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এজন্য রাষ্ট্রপক্ষ মানিককে আসামি হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। মামলাটি তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে তদন্ত করেছেন। সুজায়েত হোসেন সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে অভিযোগপত্র দাখিল করায় তার বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কিশোরী খুন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর