রক্ষীবাহিনীতে পরিণত হবেন না— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খসরু
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘রক্ষীবাহিনী’ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র হত্যা দিবস এবং বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাকশালের সময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। হাজার হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল রক্ষীবাহিনী। সেসময় তারা রাষ্টের সব সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছিল। সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে তুলে দিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না, সব ক্ষমতা ছিল রক্ষীবাহিনীর হাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান, আপনারা রক্ষীবাহিনীতে পরিণত হবেন না।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী বসবাস করছে। সামনে আরও একা হয়ে যাবে, তখন আর জনগণের কাছে যেতে পারবে না। আওয়ামী লীগের আশ্রয়স্থল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কিছু কর্মকর্তা ও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা। যাদের ওপর ভর করে তারা ক্ষমতায়, তাদের আমরা বার্তা দিচ্ছি- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সংবিধান মোতাবেক এ দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, সন্ত্রাসীদের বাধাগ্রস্থ করবেন এবং সাংবিধানিক অধিকার কেউ বাধাগ্রস্থ করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
‘কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ সংবিধানকে সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণকে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আপনারা যদি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা, সম্মান রক্ষা করতে না পারেন তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রবর্তন করতে পারবেন না। গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, ভয়ভীতি দেখিয়ে সংবিধান রক্ষা করতে পারবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। আপনারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনারা আজ ব্যর্থ।’
বাকশালের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, ‘বাকশাল হচ্ছে ভোট চুরির মেশিন। নির্বাচনে যাতে তাদের যেতে না হয় সেজন্য সব দল বন্ধ করে বাকশাল নামে একটি স্বৈরাচারি দলের জন্ম দিয়েছিল তারা। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে তারা আইনের শাসনকে নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিল। আইনের শাসনের অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিল। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হনন করেছিল। সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল।’
‘আওয়ামী লীগের নেতারা বেহেশতে আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সব ব্যাংক এখন খালি। রিজার্ভ খালি। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার নোট নতুন করে ছাপানো হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে আজ টাকা নেই, রিজার্ভ নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দশ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পাচার করে বিভিন্ন দেশে দেশে ঘরবাড়ি করেছে। রিজার্ভ খালি, তাই দেশের মানুষের জন্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না ডলার নেই বলে। যার জন্য দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা জনগণের অর্থ চুরি, ব্যাংক লুটপাট, মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ তাদের পকেট ভর্তি টাকা। পণ্যের বাজারমূল্য যতই বাড়ুক তাদের সমস্যা হবে না। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। তারা বেহেশতে আছে। তাদের আগামীর বেহেশতের দরকার নেই। আগামীর বেহেশতে যাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। যারা নির্যাতিত হচ্ছে, কারাবরণ করছে, অত্যাচারে মারা গিয়েছে তারাই বেহেশতে যাবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও নগর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালালউদ্দীন মজুমদার, হারুনুর রশীদ, নগর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সাত্তার, উত্তর জেলার যুগ্ন আহবায়ক নুরুল আমিন, ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হোসেন এনাম প্রমুখ।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম