Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ বছরের প্রকল্পে যাচ্ছে ১৭ বছর

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১০:৩৫

ঢাকা: আবারও বাড়ছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ‘বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স’ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ। তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে ১৭ বছর। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর পরেও প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে না। এখন আবার নতুন ব্যয় এবং মেয়াদ বাড়িয়ে চতুর্থ সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ধাপে ধাপে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৪২ কোটি ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬২ দশমিক শূন্য শতাংশ। খবর পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন শেষ করবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইসলামাবাদ।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের ২ মে প্রকল্পটির মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এক বছর অর্থাৎ ২০১১ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

এরপর ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রকল্পটির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এতেও শেষ হয়নি বাস্তবায়ন। এরপর প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৫১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত বয় ধরে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ফের বাড়ে ব্যয় ও মেয়াদ।

বিজ্ঞাপন

এবার প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মোট ৬৪ কোটি ৫২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। এ সংশোধনী পরিকল্পনামন্ত্রী ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি মোট ৭৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২২ সালের জুন মেয়াদ ধরা হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাব ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় একনেক।

কিন্তু ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের পাকিস্তানের পিডব্লিউডির রেইট সিডিউল অনুসারে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

এছাড়া আগের ডিজাইনের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে মূল্য সমন্বয় ও নতুন কাজ গুলোর জন্য অতিরিক্ত ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বৃদ্ধিসহ অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সার্বিক বিবেচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোট ৯৭ কোটি ৪২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ করে প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে এই সংশোধনীতে এক বছরের পরিবর্তে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ৩ বছরের প্রকল্পটিতে সময় চলে যাচ্ছে ১৭ বছর।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পাকিস্তানের পিডব্লিউডির রেইট সিডিউল অনুসারে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আগের ডিজাইনের সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি। পাশাাপাশি ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানী রুপির মানের অবনমন ও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বা তিন বছর ধরে বিশেষ করে একবছর ধরে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে।

আরও যেসব কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-চ্যান্সারি, কনস্যুলার ব্লক, আবাসিক ভবন ও সিনিয়র অফিসারদের কোয়ার্টারের আগের ডিজাইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এছাড়া কিছু বাইরের কাজ যেমন- সীমানা প্রাচীর, ই-ভিসার জন্য সার্ভার রুম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সমন্বয় ও নতুন কাজগুলোর জন্য অতিরিক্ত ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ ২ বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার সারবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নির্মাণাধীন চ্যান্সরি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে নিজস্ব ভবনে মিশনের দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ফলে প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন যোগ্য।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের জন্য স্থায়ী নিজস্ব ভবন কমপ্লেক্স নেই। বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে দূতাবাসের কার্যক্রম চলছে। ২০০৩ সালে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদ কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়। ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশ হাইকমিশন জমির দখলভার নেয়। সেখানে স্থায়ী দূতাবাস ভবন নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের একটি দল ২০০৬ সালের ২ থেকে ৫ আগস্ট ইসলামাবাদ সফর করে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর ২০০৭ সালের জুলাই থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে পাকিস্তানে বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/জেজে/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর